আল-ফিকহ বিভাগ পড়তে পড়তে ‘আদু ভাই’ by নাজমুস সাকিব

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ বিভাগের সভাপতিসহ বিএনপি ও জামায়াতপন্থী পাঁচ শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়েছেন এ বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগটি প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও একটি ব্যাচ তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি।
বিভাগটির প্রথম ব্যাচের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, পড়তে পড়তে ‘আদু ভাই’ হয়ে গেলাম। এখনো পাস করে বেরোতে পারলাম না। সনদ না থাকায় চাকরিও পাচ্ছি না।
আল-ফিকহ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুষদভুক্ত আল-ফিকহ বিভাগটি ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক, ব্যাচ ১০টি এবং শিক্ষক আটজন। এর মধ্যে স্নাতকোত্তরের তিনটি, স্নাতক (সম্মান) শেষবর্ষের একটি, তৃতীয় বর্ষের দুটি, দ্বিতীয় বর্ষের দুটি এবং প্রথম বর্ষের দুটি ব্যাচ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, মাস তিনেক আগে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের (বিভাগের প্রথম ব্যাচ) স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো শুরু হয়নি। চলতি বছরের ২৬ মে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অথচ অন্যান্য বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বেরিয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিভাগের জামায়াতপন্থী শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক আবুবকর মো. জাকারিয়া মজুমদার ও সহযোগী অধ্যাপক নাজিমউদ্দিন এবং বিএনপিপন্থী সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাব ও সহযোগী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ঠিকমতো ক্লাস ও পরীক্ষা নেন না। তাঁরা পরীক্ষার খাতা ঠিক সময়ে জমা দেন না এবং অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। নাজিমউদ্দিন শিক্ষকতা ছাড়াও আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক হামিদা খাতুন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেন না। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে আগের উপাচার্যের কাছে তিনবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্নাতকোত্তরের এক ছাত্র বলেন, ‘আবুবকর মো. জাকারিয়া মজুমদার দুই বছর আমাদের ক্লাস নেননি। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর তিনি মাত্র দুটি ক্লাস নিয়েছেন।’ এ ব্যাপারে আবুবকর মো. জাকারিয়া মজুমদারের সঙ্গে বিভাগে দেখা করতে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি এবং তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আনোয়ারুল ওহাবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি মাসের পর মাস পরীক্ষার খাতা আটকে রাখেন। অথচ তিনি ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নেন। এ ব্যাপারে আনোওয়ারুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।’
নাজিমউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে থাকি।’ নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সব সময় ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করি।’
হামিদা খাতুনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নমনীয় এবং সভাপতি হিসেবে তাঁকে অন্য শিক্ষকেরা মানেন না। এ ব্যাপারে হামিদা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি, যেসব শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নেন না এবং দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকেন, তাঁদের ব্যাপারে এখন থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.