আতঙ্কিত এবং আশান্বিত by মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

মহাকালের পঞ্জি থেকে একটি ক্ষুদ্র অংশ গত হয়ে গেল। নতুন বছর ২০১৩ চালু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ একাধিক বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডারে অভ্যস্ত। দৈনন্দিন সরকারি কর্মকাণ্ড, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, জীবনযাপন ইত্যাদির জন্য খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার প্রচলিত।
লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষিকাজের সঙ্গে এবং প্রতীকী অর্থে কিছু ব্যবসায়িক কর্মের সঙ্গে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রযোজ্য। সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কাজের জন্য বাংলা এবং চান্দ্রমাসের ক্যালেন্ডার যৌথভাবে অনুসরণ করেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য চান্দ্র এবং বাংলা ক্যালেন্ডার যৌথভাবে অনুসরণ করেন। ইসলাম ধর্মের অনুসারী তথা মুসলমানরা ধর্মীয় কাজের জন্য একান্তভাবেই চান্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেন। যা হোক, আমরা খ্রিস্টীয় নববর্ষের তথা ২০১৩ সালের আলোচনায় আসতে চাই।
৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগরীতে প্রচণ্ডভাবে এবং অন্য মহানগরগুলোয় আরেকটু কম মাত্রায় নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়েছে ভিন দেশীয় কায়দায় এবং ভিন দেশীয় মূল্যবোধে। ছয়-সাত বছর ধরে পুলিশ নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত নিচ্ছে। ওই নিরাপত্তাটা হলো শারীরিক ও বস্তুগত। কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে মধ্যরাতে নববর্ষ উদ্‌যাপনরত তরুণ-তরুণীদের সমাগমের কোনো একপর্যায়ে একজন বা একাধিক তরুণীর (তথা মহিলার) সম্ভ্রম ও শ্লীলতাহানি হয়েছিল। সেই থেকে পুলিশ ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতকে প্রকাশ্যে বা বহিরাঙ্গনে তরুণ-তরুণীদের অনুষ্ঠান বা আনন্দ-উদ্‌যাপন নিষিদ্ধ করেনি; কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। প্রশ্ন, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়া গেলেও জাতীয় সংস্কৃতির নিরাপত্তা কে দেবে? ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি হোটেলের নাম উল্লেখ করছি। সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক হোটেল, র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন), ওয়েস্টিন হোটেল ইত্যাদি। এ হোটেলগুলো পাঁচতারা মানের বলেই পরিচিত। এ হোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং সুযোগ-সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের ও প্রথার। এ হোটেলগুলোতে যাঁরা বসবাস করেন অতিথি হিসেবে তাঁরা বিভিন্ন দেশের। এ হোটেলগুলোতে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে যেই বিশেষ অনুষ্ঠানমালা হয়ে গেল সেগুলো কি বিদেশি অতিথিদের জন্য, নাকি দেশীয় ব্যক্তিদের জন্যও ছিল? উত্তর হলো, এক ঢিলে দুই পাখি মারা যথা দেশীয় ব্যক্তিরাও উপভোগ করলেন এবং হোটেলে বসবাসরত বিদেশি অতিথিরা তো করলেনই। পৃথিবীর অন্যত্র বিশেষত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে যেই নিয়মে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নববর্ষ উদ্‌যাপিত হলো সেই নিয়মেই ঢাকা মহানগরীর কিছু কিছু জায়গায়ও উদ্‌যাপিত হলো। অর্থাৎ আমরা বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ হলাম, অর্থাৎ আমরা বিশ্বায়নের প্রভাবে থাকলাম। শুধু একটি প্রশ্ন করেই এই অনুচ্ছেদ শেষ করছি। এর কোনো ব্যতিক্রম কি সম্ভব নয়?
২০১২ চলে গেল। আজকের দিনের জন্য পেছনের দিকে তাকালে নিকটতম মাস হলো ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়েছে এমন একাধিক চারাগাছ, যেগুলো ২০১৩ সালে বড় হবে। ওই রকম একটি চারাগাছ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সরকারবিরোধী শিবিরের আন্দোলন। ২০১৩ সালের আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা পাবে। ডিসেম্বর ২০১২-তে পালিত রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর মধ্যে দুটি কর্মসূচি তুলনামূলকভাবে অভিনব ছিল। একটি ছিল ৯ ডিসেম্বরে অবরোধ কর্মসূচি এবং আরেকটি ছিল ২৬ ডিসেম্বরে জনসংযোগ কর্মসূচি। এরূপ কর্মসূচি ২০১৩-তে অব্যাহত থাকবে বলেই বিশ্বাস করি। আরো দু-একটি অভিনব কর্মসূচি অভ্যাস করা হবে বলে আশা করি। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলো ত্রিমুখী-কঠিন হওয়ার কথা। যথা একদিকে সরকারের ওপরে চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি করতে হবে যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তথা নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি যেই নামেই ডাকা হোক না কেন পুনর্বহাল করে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ওপর যেন কষ্ট কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সর্বশেষ সাধারণ মানুষকে আন্দোলনের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। ১৮ দলীয় জোট এ প্রসঙ্গে সচেতন বলেই অনুভব করি।
কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, ক্ষমতাসীন মহাজোট এবং বিরোধী শিবিরের ১৮ দলীয় জোট পারস্পরিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু আলোচনার পরিবেশ কি বিদ্যমান? আমার পক্ষ থেকে উত্তর হলো, আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য উদ্যোগ ক্ষমতাসীন মহাজোটকেই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) এবং অন্যান্য শরিক দলের প্রধান (যথা জাসদের সভাপতি) যেই নিয়মে ও যেই আঙ্গিকে কথাবার্তা বলেন, সেখান থেকে পরিবেশ উন্নয়নের আশা করা কষ্টকর। যা হোক, ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ অপরাহ্ন বা রাত্রিকালীন টেলিভিশন নিউজ এবং ১ জানুয়ারির পত্রিকাগুলোর সংবাদের অংশ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সুবাদে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হতেও পারে। কিন্তু আমজনতার মনে একটি প্রশ্ন থেকেই যাবে এই মর্মে যে ক্ষমতাসীন মহাজোট কি আসলেই আলোচনায় আগ্রহী কি না? আমার মতে, আলোচনা হবে কী হবে না সেটা তৃতীয় প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, আলোচনায় আগ্রহী কি না; দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, আলোচনার পর সমাধানে আসতে আগ্রহী কি না। এ দুটি প্রশ্নের পর আসবে তৃতীয় প্রশ্ন। যা হোক, রাজনৈতিক অঙ্গনে আন্দোলন ছাড়া অন্যান্য প্রসঙ্গও থাকতে পারে। ওইরূপ প্রসঙ্গগুলো যৎকিঞ্চিত আলোচনা করছি।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁরই নামে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরের কেবিনেট, যুদ্ধ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দি ও প্রবাসজীবন থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন-দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরত এসেছিলেন। ওই দিন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ তথা আপামর জনতা আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের আরেকজন মহানায়ক হলেন ১৯৭১-এর মেজর জিয়াউর রহমান, যিনি আজকে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম নামে পরিচিত। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার তথা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তাও হচ্ছেন জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম। ১৯ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিবস। অতএব এ দুটি দিন (১০ এবং ১৯ জানুয়ারি) রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে পালিত হবে। ১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন নামক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। ওয়ান-ইলেভেনের দুই বছরের কিঞ্চিত সুখময় ও ব্যাপক দুঃখময় স্মৃতি লাখ লাখ মানুষের মনে ভেসে আসবে ১১ জানুয়ারি তারিখে এবং তার দু-এক দিন পর পর্যন্ত। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকারের অনুকূলে আজীবন সংগ্রামী নেতা বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, তৎকালীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ রেকর্ড সৃষ্টিকারী কম সময়ে আলোচনা করে সংবিধানে এমন একটি সংশোধনী আনে, যেটি এখন পর্যন্ত সব ধরনের গণতন্ত্রমনা মানুষের কাছে একটি ভীতিময় দুঃস্বপ্ন। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে অবলুপ্ত করা হয়, একটি মাত্র নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয়, যার নাম ছিল বাকশাল। ওই আমলে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি জায়গায় চালু কঠোর সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট পদ্ধতির শাসন তথা একদলীয় শাসন বাংলাদেশে কায়েম করা হয়েছিল এবং পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশেই এক ব্যক্তির শাসন কয়েম করা হয়েছিল। গণমাধ্যমের ওপর খৰ নেমে এসেছিল। গণতন্ত্র ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছিল। অতএব ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি ওই স্মৃতি ভেসে আসবে। জানুয়ারি মাসের দুটি তারিখ (১০ এবং ১৯) থেকে মানুষ যেমন আশান্বিত আলোক কামনা করবে তেমনি অন্য দুটি তারিখ (১১ এবং ২৫) এর স্মৃতির কারণে আতঙ্কিতও থাকবে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস সমাগত। ভাষাসংগ্রামের মাস, ভাষার ঐতিহ্য রক্ষার মাস, বাংলা ভাষাকে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে সুসংহত করার মাস। ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ এলেই বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হবে। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে যেমন মাসব্যাপী বইমেলা হবে তেমনি বায়তুল মোকাররমের প্রাঙ্গণে ইসলামিক প্রকাশনার বইমেলা হবে। প্রচুর নতুন বই আসবে এবং মানুষ বইয়ের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাবে। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে ঢাকা মহানগরীর মানুষ একটু ব্যতিক্রমী বিকল্প পাবে। মার্চ মাস এলেই শুরু হবে স্বাধীনতার আলোচনা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত ভাষণ মানুষের স্মৃতিতে আবার জাগ্রত হবে এবং মানুষ উদ্দীপ্ত হবে। ১৯৭১-এর মার্চের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি পত্রিকার কলামে, রেডিওর টক শোতে এবং সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে উঠে আসবে। আনন্দ মিছিল হবে, শোভাযাত্রা হবে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ তীব্রতর হবে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপিত হবে। স্বাধীনতার ঘোষণার স্মৃতি উদ্‌যাপিত হবে, শহীদ জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে এমন স্মৃতি রোমন্থিত হবে। এপ্রিল মাস আসবে। ১৪ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপিত হবে। কোনো এক দিন ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপিত হবে, পছন্দ করি বা না করি।
আর কী হবে? উদ্বেগ বাড়বে, উৎকণ্ঠা বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী গতি থেমে থেমে অব্যাহত থাকবে। শেয়ারবাজারে শেয়ারগুলোর দাম কোনো দিন উঠবে, কোনো দিন নামবে, কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে যেই মহা কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৩০-৩২ লাখ খুদে শেয়ারব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তাঁদের কোনো কূলকিনারা হবে না। গৃহিণীদের চুলায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে না; কিন্তু গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে- এ উৎকণ্ঠায় ঘুম হারাম হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ কাগজে-কলমে বেড়েছে, লোডশেডিং কোনো দিন কমে তো কোনো দিন বাড়ে; কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে সে কথা জনগণ ক্রমেই বুঝতে শুরু করেছে। বিদ্যুতের দাম কোন দিন বাড়ে (?) এটা নিয়ে মানুষের মন আতঙ্কিত। আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর মন রক্ষা করতে গেলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে বলে কর্তৃপক্ষীয় মহল প্রচার করেছিল, কিন্তু জনগণকে শান্তি দিতে হলে বাড়ানো চলবে না। দাম বাড়ালে অতিরিক্ত উপার্জন হবে, কিন্তু সেই উপার্জন কোন খাতে ব্যয় হবে? জনগণ সন্দেহ করে যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যে আর্থিক অপচয় হয়েছে সেটাই পোষানো হবে মূল্যবৃদ্ধির উপার্জন দিয়ে।
আমাদের কামনা শান্তি। কিন্তু শান্তি সহজলভ্য নয়। গ্রহণযোগ্য বা অনুভব করা যায় এমন শান্তি পেতে হলে কিছুটা অশান্তির মধ্য দিয়ে দিন যাপন করতে হয়। কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ১৯৭১ সালে ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছিল বলেই স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। শান্তি চাই- এ অসিলায় যদি সবাই ঘরে বসে থাকত, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ কে করত? অতএব শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। সেই ত্যাগ হবে সততার অনুকূলে, মেধার অনুকূলে, সাহসের অনুকূলে, স্পষ্ট কথার অনুকূলে, যুক্তির অনুকূলে, পরিবর্তনের অনুকূলে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুকূলে, নীতির অনুকূলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের একজন হয়ে দেশবাসীর কাছে এ ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান আমি বিনয়ের সঙ্গে করতে পারি বৈকি। তবে যেই অশান্তিপূর্ণ দিনগুলোর মধ্য দিয়ে এখন জীবন যাপিত হচ্ছে,
এই অশান্তির শেষে আসলেই কি শান্তির
কোনো আলোকরেখা আছে- এটা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com

No comments

Powered by Blogger.