কয়েকজনের সঙ্গে আপসরফা- লন্ডনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিচারপতির মানহানির মামলা by কামাল আহমেদ

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী লন্ডনের বাংলা সংবাদপত্রগুলোর প্রায় তিন ডজন সাংবাদিক ও সম্পাদক এবং চারজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়েরের পর কয়েকজনের সঙ্গে আদালতের বাইরে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ও সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের ক্ষমা প্রার্থনার ভিত্তিতে আপসরফা করেছেন।
বিচারপতি চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে উভয় পক্ষের সমঝোতার শর্ত অনুসারে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এদিকে একাধিক পত্রিকা মানহানির অভিযোগ নাকচ করে বিচারপতি চৌধুরীর দায়ের করা মামলা আদালতে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
যেসব রাজনীতিকের বিরুদ্ধে বিচারপতি চৌধুরী মামলা করেছেন, তাঁদের মধ্যে বিএনপির দুজন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একজন করে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক নতুন দিন পত্রিকার উপসম্পাদক। যাঁদের সঙ্গে বিচারপতি আপসরফায় পৌঁছেছেন, তাঁদের মধ্যে মহাজোটের শরিক দল দুটির দুই নেতা রয়েছেন।
সূত্রগুলো জানায়, তিনটি পত্রিকা সাপ্তাহিক নতুন দিন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ ও বাংলা টাইমস কর্তৃপক্ষ বিচারপতি চৌধুরীর সঙ্গে আপসরফায় পৌঁছেছে। ফলে ওই তিনটি পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের কাছে কোনো সমন আসেনি বলে কয়েকজন জানিয়েছেন। তবে আদালতে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তাঁরা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রকাশ করতেও অস্বীকৃতি জানান। নাদিয়া চৌধুরী জানান, এই তিনটি পত্রিকা আপসরফার অংশ হিসেবে নিজ নিজ প্রকাশনায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রকাশ করেছে।
অন্য যে তিনটি পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে, সেগুলো হলো: সাপ্তাহিক সুরমা, পত্রিকা ও লন্ডন বাংলা। অবশ্য এই মামলায় যাঁদের নাম আছে তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন হলেন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ও সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক। সালাম জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর তিনি সমন পেয়েছেন। মামলায় ৫০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ এবং পত্রিকাগুলোতে ক্ষমা প্রার্থনার ঘোষণা প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছিল। বিবাদীদের মধ্যে সাপ্তাহিক সুরমার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম বশির আহমদের স্ত্রী আয়শা আহমেদ ও তাঁর ছেলে সার্জ আহমেদও রয়েছেন। নতুন বছরের শুরুতেই এঁদের কাছে মামলার সমন পৌঁছায়।
জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী লন্ডনে আইনজীবীদের এক সেমিনারে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এলে জাতীয়তাবাদী দল যুক্তরাজ্য শাখার পক্ষ থেকে তাঁকে কালো পতাকা প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তখন একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিএনপির নেতারাও বক্তব্য দেন। এই বিক্ষোভের যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে এমন শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ আছে, যা ব্রিটিশ বর্ণবাদবিরোধী আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
নাদিয়া চৌধুরী জানান, সভাটি ছিল নির্দলীয়। কিন্তু সেটি আওয়ামী আইনজীবীদের সভা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এতে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর মানহানি হওয়ায় তিনি মামলা করেছেন।
বিচারপতি চৌধুরীর পক্ষে আইনগত প্রতিনিধিত্ব করছে ডেভরোস সলিসিটরস নামের একটি আইনি সেবাপ্রতিষ্ঠান। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লন্ডনে মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি মামলা করা হয়ে থাকে, ফৌজদারি মামলার কোনো বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির রেওয়াজ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.