প্রতিবাদ ঘৃণা আর বিৰোভের মধ্যে ৫ খুনীর লাশ দাফন- বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ইচ্ছা করে কবরডা খুঁইড়া ফ্যালাইয়া দেই_ এক বৃদ্ধার প্রতিক্রিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের লাশ বৃহস্পতিবার তাদের নিজ নিজ গ্রামে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ এই ঘৃণিত খুনীদের লাশ দাফন করতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ-র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অনেকে তাদের গ্রামের পবিত্র মাটিতে এসব খুনীকে দাফন করতে দিতে চায়নি_ তেমনি বিভিন্ন স্থানে এদের ফাঁসির খবরে উৎফুলস্ন জনতা বৃহস্পতিবার আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেছে এতে তাদের গ্রামের মাটি কলুষিত হয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁর মলিস্নকপুর থেকে জানান, লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের লাশ
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তার পৈত্রিক ভিটা মারমা মলিস্নকপুরে পেঁৗছলে কৌতূহলী মানুষ সেখানে ভিড় জমায়। ভোর রাত থেকেই সেখানে নওগাঁ, রাজশাহী ও বগুড়া থেকে আগত বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরাও অবস্থান নেয়। মারমা মলিস্নকপুর পুরনো মসজিদের সামনে ঢাকা শাহবাগ থানার এসআই মোসত্মাফিজুর রহমান কর্নেল ফারম্নকের চাচাত ভাই দেওয়ান আসাদুর রহমান মিঠুর কাছে লাশ হসত্মাানত্মর করেন। ফারম্নকের স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। স্ত্রীর সঙ্গে আগে থেকেই কোন বনিবনা না থাকায় তারা কেউ লাশ নিতে বা দেখতে আসেনি। তবে কর্নেল ফারম্নকের বৃদ্ধ মা মাহমুদা রহমান, বোন ইয়াসমিন রহমান, ভগি্নপতি আশফাক রহমানসহ আত্মীয়-স্বজন জানাজার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। লাশবাহী গাড়িটি নওগাঁ শহর থেকে মারমা মলিস্নকপুরে যেতে পথিমধ্যে চকআতিথা বাজার সংলগ্ন মোড়ে বিুদ্ধ জনতা লাশবাহী গাড়ি ল্য করে জুতা নিপে করে। পুলিশ ও র্যাবের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোর রাতেই ওই গ্রামে কবর খোঁড়া হয়। লাশ পেঁৗছার পর ওই মসজিদেই গোসল করানোর পর সেখানে সংপ্তি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ দিকে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার নায়ক লে. কর্নেল ফারম্নক রহমানের লাশ মারমা মলিস্নকপুরে দাফন করতে না দেয়ার দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিােভ মিছিল করে। বর্ষাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুনিরম্নল ইসলাম মিঠু জানান, প্রশাসন তড়িঘড়ি করে কর্নেল ফারম্নককে এই মারমা মলিস্নকপুরে দাফন করে এই এলাকাকে কলুষিত করেছে। তারা আগামী দুই দিনের মধ্যে লাশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায়, আন্দোলনের ডাক দেবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
অপরদিকে খুনী ফারম্নকের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নওগাঁসহ বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল হয়েছে। শহরের কালিতলা মহলস্নায় এবং চকআতিথা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
মারমা মলিস্নকপুর পুরনো জামে মসজিদের ঈমাম এটিএম আব্দুল কাইয়ুম জানাযা পরিচালনা করেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোপীনাথপুর থেকে ফিরে জানান, এক গাদা জুতো ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের শববাহী কফিনটির ওপর। কফিনটি যখন তার নিজ বাড়িতে পেঁৗছে তখন তার স্বজনরা জুতোগুলো সরিয়ে ফেলে। স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন নেতা-কমর্ীরা আনন্দ মিছিল করে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাবের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গোপীনাথপুরে খাঁ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। তার কবরের পাশে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ উপস্থিত ছিল। উপস্থিত ছিল তার আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসীসহ বেশ কিছু লোক। শাহরিয়ারের স্ত্রী সানোয়ারা খানম, পুত্র আশরাফুর রশীদ খান, কন্যা মেহনাজ রশীদ খানম, ভাই মামুনুর রশীদ হেলাল, পিতা হারুনুর রশীদ ওরফে সরম্নজ খান সে সময় বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাতেই তার জন্য পারিবারিক কবরস্থানে কবর খুঁড়ে রাখা হয়। রাত থেকেই শাহরিয়ার-এর বাসভবন ও আশপাশ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব মোতায়েন ছিল। স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোখলেছুর রহমান জানাজা পড়ান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হাইয়ুল কাইয়ুম, পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান, র্যাব-৯ কমান্ডিং অফিসার, কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহাম্মদ কবীর দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন। ভোর ৬টা ২৮ মিনিটে ঢাকা থেকে লাশ বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো_ছ ৭১-০১৩১) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপরে প্রতিনিধি, র্যাব ও পুলিশের প্রহরায় গোপীনাথপুর গ্রামে এসে পৌঁছে। এ সময় গ্রামবাসী এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। গ্রামবাসীর ভিড় সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। ছোটভাই ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ হেলাল ও শাহরিয়ার রশিদের পুত্র আশরাফুর রশিদ খান পরিবারের প থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় লাশ গ্রহণ করে। এরপর বাড়ির উঠানে কফিনটি রাখা হয়। তার পুত্র বলেন, সরকার যা ভাল মনে করেছে তা করেছে। পারিবারিক গোরসত্মানে কবর প্রস্তুত, জানাজা পড়াতে মৌলভীসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা তদারকী করে জেলা ও পুলিশ প্রশসন। তবে লাশ আনার পর আত্মীয়, জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর লোকজন ব্যতীত তেমন লোকজন উপস্থিত হয়নি। আশপাশ প্রতিবেশীদের খুব একটা আফসোস করতে দেখা যায়নি। শাহারিয়ার রশিদের স্ত্রী, ১ ছেলে ১ মেয়ে তখন খানিক দূরে উপস্থিত ছিল। তার শতবর্ষী বৃদ্ধ পিতা হারম্ননুর রশিদ খান চলাচল করতে পারেন না। লোকজন কোলে করে তাকে পুত্রের লাশ দেখান। সে সময় তিনি স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন। তিনি নিজেও জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা ছিল তাদের কাপুরম্নষোচিত কাজ। তার ফাঁসি হওয়ায় গ্রামের মানুষের মধ্যে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অন্যদিকে সকাল ১১টায় কসবায় সর্বসত্মরের লোকজনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বিশাল বিজয় মিছিল করে কসবা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদণি করে। এদিকে শহরের পুরনো কোর্ট মসজিদে বাদ আছর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের প থেকে শোকরানা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিকালে জেলা আওয়ামী লীগ শহরে একটি আনন্দ মিছিল বের করে।
এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে অশালীন মনত্মব্য করায় ১ জনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম মোসত্মফা কামাল, পিতা হাজী মোঃ আলী সরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌর আধুনিক সুপার মার্কেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। সে সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অফিস সহকারী।
রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনী মেজর (অব.) বজলুল হুদার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের নগর বোয়ালিয়া বড় গোরস্থানে বাবা-মার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। সকাল পৌনে ১০টায় র্যাব-পুলিশ-কারারৰীদের কড়া নিরাপত্তায় ৬টি গাড়িবহর হাট বোয়ালিয়া গ্রামের বজলুল হুদার পৈত্রিক বাড়িতে পেঁৗছে। এ সময় সাদা রংয়ের একটি এ্যাম্বুলেন্স থেকে কাঠের কফিনে রাখা হুদার লাশ নামানো হয়। ডিএমপির একজন এসআই'র কাছ থেকে লাশ গ্রহণ করেন তার ছোটভাই নূরম্নল হুদা ডিউক ও ছোট বোন মাহমুদা ফেরদৌসী হেলেন। এ সময় তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে নিরাপত্তা কমর্ীদের হিমশিম খেতে হয়।
পৈত্রিক ভিটায় তার গোসল শেষে বেলা ১২টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় ফুটবল মাঠে। বেলা ২টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নগর বোয়ালিয়া বড় গোরসত্মান মাঠে। এরপর সেখানেই তার লাশ দাফন করা হয়। জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন হাট বোয়ালিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা লোকমান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত- কমর্ীরা এ কাজে বিরত থাকেন। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক ভোলানাথ দে, পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন, আলমডাঙ্গা ইউএনও আব্দুস সালামসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্থানীয় ভাংবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মি. ঠান্ডু বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সনত্মান বঙ্গবন্ধুর সপরিবারের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় আমরা এলাকাবাসী খুশি।
বেলা ১১টায় জেলা ছাত্রলীগ ও সাড়ে ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ শহরে আনন্দ-বিজয় মিছিল বের করে। পরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সংৰিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দার টোটন, জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি আফজালুল হক, জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল করিম প্রমুখ।

'ইচ্ছা করে ওর কবরডা খুঁইড়া ফ্যালাইয়া দেই'
নিজস্ব সংবাদদাতা গলাচিপা থেকে জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী ল্যান্সার মহিউদ্দিন ও আর্টিলারি মহিউদ্দিনের লাশ নিজ নিজ গ্রামে দাফনে এলাকার লোকজন ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। প্রায় সকলেই বলেছেন খুনীদের লাশ গ্রামে আনায় তাদের কলঙ্ক আরও বেড়েছে। নতুন প্রজন্ম বলেছে দুই মহিউদ্দিনকে তাঁরা চোখে দেখেননি। কিন্তু তাদের নৃশংসতার কথা শুনেছেন। যা তাদের মনে গভীর ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। সেই কুখ্যাতদের কবর তাঁদের দেখতে হবে সেটি তাঁদের জন্য লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর প্রবীণরা বলছেন যে লোক দুটোকে আমরা ছোটবেলায় চিনতাম বড় হয়ে তারা পাল্টে গেল। হলো খুনী। গোটা গ্রামকেই করেছে কলঙ্কিত। খুনীদের গ্রামে আমাদেরও কবর হবে এটিও আরেকটি কলঙ্ক, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে বেড়াতে হবে। খুনীদের দাফন অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষের মুখে মুখে এ ধরনের কথাবার্তাই শুনেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগ নেতা একই গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর হাওলাদার (৬০) বলেন, খুনী মহিউদ্দিনের লাশ আমরা এখানে দাফন করতে দিতে চাইনি। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মহিউদ্দিনের কবর দেখাটা আমাদের জন্য কোন সুখকর কিছু হবে না। এটি আমাদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।
সোহরাব তালুকদার (৬২) জানান, 'ও-র কবরডারে ইচ্ছা করে খুইড়া ফ্যালাইয়া দেই।' এইডা আমাগো গ্রামের মানুষগোরে কি যে কষড দেবে, এ্যাইডা আপনাগো কইয়া বুঝাইতে পারম্নম না।
নতুন প্রজন্মের যুবক মামুন জানান, খুনী মহিউদ্দিনকে চোখে দেখিনি। কিন্তু পত্রপত্রিকা বইপুসত্মক আর টিভিতে তার নৃশংসতার কথা শুনে ঘৃণা করেছি। কিন্তু সেই ঘৃণিত ব্যক্তির কবর দেখতে হবে এটা ভাবতেই বুকের ভেতর থেকে বমি উঠে আসে।
স্থানীয় কলেজের ছাত্র রফিক জানান, মহিউদ্দিনকে নিয়ে এলাকার একটি কুকুরেরও কোন মায়া নেই। যে কারণে আমরা গ্রামের কোন মানুষ তার জানাজায় যাইনি। বাড়ির পঁচিশ ত্রিশ জন মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দিয়েও আমরা এক ধরনের প্রতিবাদ জানিয়েছি।
মৌডুবি গ্রামের আর্টিলারি মহিউদ্দিনের দাফন নিয়েও এলাকায় মিলেছে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া। পাশের বাড়ির সালাম গাজী জানান, আমরা কোনদিন মহিউদ্দিনের বাড়ির মসজিদে নামাজ পর্যনত্ম পড়তে যাইনি। কারণ একটা খুনীর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নামাজ হয় না বলেই মনে করি। অথচ সেই মহিউদ্দিনকে এখন বাড়িতেই দাফন করা হয়েছে। এটি আমাদের গোটা গ্রামের জন্য কলঙ্ক।
এদিকে, হরিদেবপুর ফেরিঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের পৰে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, গলাচিপার ওসি রবিউল ইসলাম ও রাঙ্গাবালীর ওসি মোঃ আখতার মোর্শেদ দুই খুনীর লাশ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে পৃথক দু'টি স্পিডবোটে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আর্টিলারি মহিউদ্দিনের লাশ বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মৌডুবি ও ল্যান্সার মহিউদ্দিনের লাশ রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের নেতাগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। দু'টি গ্রামে আগের রাত থেকে র্যাব ও পুলিশের কঠোর প্রহরা বসানো হয়। দু'টি কবরও খুঁড়ে রাখা হয়। গলাচিপায় লাশ গ্রহণের সময় খুনীদের পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি।
অপরদিকে দুপুর বারোটা থেকে খুনী ল্যান্সার মহিউদ্দিনের গ্রামেও দফায় দফায় মিছিল সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় জনতা গ্রামে লাশ দাফনের প্রতিবাদ জানায়। বেলা পৌনে তিনটায় লাশ নেতাগ্রামে পেঁৗছলে মানুষ আরও বিৰুব্ধ হয়ে ওঠে। শেষ পর্যনত্ম পুলিশ ও র্যাবের হসত্মৰেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নেতাগ্রামে মহিউদ্দিনের চাচাত ভাই শহিদুল আলম লিটন তালুকদার লাশ গ্রহণ করেন। পরিবারের লোকজন ছাড়া জানাজায় গ্রাম বা ইউনিয়নের মানুষ অংশ নেয়নি। আর্টিলারি মহিউদ্দিনের নিজ গ্রাম মৌডুবিতেও হাজারো বিৰুব্ধ মানুষ লাশ দাফনের প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ করেছে। বাড়ির মধ্যেও মিছিল হয়েছে। মহিউদ্দিনের লাশ তার চাচা আবু হাওলাদার গ্রহণ করেন। বেলা পৌনে চারটায় মহিউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পরিবারের লোকজন ব্যতীত গ্রামের মানুষ জানাজায় অংশ নেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.