সুজনের সম্মেলনে বিচারপতি হাবিবুর রহমান- ঢালাওভাবে মামলা প্রত্যাহার হলে সার্বভৌম বিচারক্ষমতা ব্যাহত হয়

রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে অপরাধ-সম্পর্কিত যেকোনো মামলা প্রত্যাহার করতে পারে। কিন্তু এই প্রত্যাহারের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। এটি কেবল ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢালাওভাবে এই ক্ষমতা ব্যবহার হলে রাষ্ট্রের সার্বভৌম বিচারের ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
রাজধানীর শিশু একাডেমীতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৪২ বছর ধরে স্থানীয় সরকারকে অবহেলা করে আসছি। নির্বাচিত লোকের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হওয়ার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের নায়েব-গোমস্তা-মুৎসুদ্দিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ধারণা, স্থানীয় সরকারকে সক্রিয় হতে দিলে অদক্ষ লোকের দ্বারা দেশের অর্থের অপচয় ঘটবে।’ তাঁর মতে, সুশাসনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মহাহিসাব নিরীক্ষক, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্মকমিশন, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ রয়েছে। এগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে সুশাসনের কথা ফাঁপা শোনাবে।
সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ ক্ষমতার মালিক। সচেতন, সোচ্চার এবং সংগঠিত নাগরিক সমাজই পারে দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, ‘এ দেশে বর্তমানে সিভিল সমাজের কোনো অস্তিত্ব নেই। এর কাঠামো ভেঙে গেছে। সিভিল সমাজের কাজ হচ্ছে নাগরিকের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সোচ্চার হওয়া। তারা সরকারের লেজুড়বৃত্তি করলে কীভাবে সুশাসন নিশ্চিত হবে?’
অনুষ্ঠানে এ এস এম শাহজাহান বলেন, ‘রাজনীতি চলছে ভাগ আর ভোগ নিয়ে। গণতন্ত্র হচ্ছে নির্বাচনে যাবার জন্য। দেশের উন্নতি হচ্ছে বানরের তেলমাখা বাঁশ বেয়ে ওঠার মতো।’ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাঁশে তেল মাখা বন্ধ করেন, দেশ আরামসে ওপরে উঠে যাবে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্য দেন।
অধিবেশনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। এতে আগামী দুই মেয়াদের জন্য নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদে নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করে সেখানে সরাসরি নির্বাচন দেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে সুজনের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে নীরবতা পালন করা হয়। অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, রুহিন হোসেন প্রমুখ।
নতুন কমিটি: সম্মেলনে সুজনের ২১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও ১৮১ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক হিসেবে বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচিত হন। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ এস এম শাহজাহান, (সহসভাপতি), আবদুল হক (কোষাধ্যক্ষ), জাকির হোসেন (সহ-সম্পাদক) নির্বাচিত হন। নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, আলী ইমাম মজুমদার, হামিদা হোসেন, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, সেলিনা হোসেন ও জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.