ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ছাড়েনি মিসর, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর মিসরের সামরিক বাহিনীকে বিপুল পরিমাণে অর্থ সহায়তা দিলেও তারা এখনো ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব পুরো পরিহার করেনি। মিসরীয় সেনাদের এ 'অকৃতজ্ঞতা'য় ভীষণ ক্ষুব্ধ মার্কিন কূটনীতিকরা।
'বিকল্প ধারার গণমাধ্যম' উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিতে এ ক্ষোভের কথা প্রকাশিত হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে জড়ানো থেকে মিসরকে বিরত রাখা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম অংশ। ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তির পর থেকেই মিসরকে বিপুল পরিমাণে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে দেশটি।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা পায় ইসরায়েল। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিসর। দেশটির সামরিক বাহিনী প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ডলার পায়। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২৫ বছরের ব্যবধানে দেশটির সঙ্গে চারটি যুদ্ধে জড়ায় মিসর। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করে এ দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি করে দেয়। এরপর গত ৩১ বছরে দেশটি থেকে তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে মিসরের সামরিক বাহিনী। কিন্তু এ অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ মানে না। এ বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিতে বলা হয়_আমরা বারবারই তাদের 'আধুনিক হুমকি' মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করতেও তারা আগ্রহী নয়। বরং এখনো তারা আগের মতোই ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত রক্ষার বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দেয়।' উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ সত্ত্বেও ইরাক ও আফগানিস্তানে সেনা পাঠাতে রাজি হয়নি মিসর। দেশটির সেনারা সর্বশেষ ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নেয়।
মার্কিন বার্তায় বলা হয়, 'দুঃখজনক বিষয় হলো, শান্তিচুক্তির ৩১ বছর পরও মিসরের সামরিক বাহিনী ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। মিসরের সীমান্ত দিয়ে গাজায় চোরাচালান বন্ধেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে তারা নিজেদের ইচ্ছা মতোই এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।' মিসরের ব্যবসা-বাণিজ্যে সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন নানা কম্পানির অবস্থানেরও সমালোচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বার্তায়। এই প্রথম মিসরের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক মনোভাবের কথা প্রকাশিত হলো। ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য কৌশলগত কারণেই মিসরীয় জেনারেলদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে দেশটি। কারণ মিসরের ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ সদস্যে সমৃদ্ধ সামরিক বাহিনী। ১৯৫২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের অবসানের পর দেশটির সব প্রেসিডেন্টই হয়েছেন সামরিক বাহিনী থেকে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকও বিমানবাহিনীর পাইলট ছিলেন।
বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিসরের বাহিনীর ক্ষোভের কথাও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির এক বার্তায় দেখা যায়, ২০১১ সাল থেকে ইসরায়েলের সামরিক সাহায্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে মিসর। দেশটির সেনা কর্মকর্তারা মার্কিন কূটনীতিকদের বলেন, 'তোমরা যেভাবেই পার কংগ্রেসকে বোঝাও যে মিসর বছরে ১৩০ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি অর্থ পাওয়ার যোগ্য।' কিছু কর্মকর্তা ইসরায়েল ও মিসরকে সমান অর্থ দেওয়ারও দাবি জানান। আগে ইসরায়েল সামরিক খাতের জন্য বছরে ২৫৫ কোটি ডলার পেত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। চলতি বছর থেকে এ অর্থের পরিমাণ হবে ৩০০ কোটি ডলার। সূত্র : এপি, নিউইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.