দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা-এরশাদ মইনসহ ছয়জনের বিষয়ে তদন্তের আবেদন

লোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার অভিযোগ গঠন ও আসামিপক্ষের আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। আগামী ১৪ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত শুনানি হবে। গতকাল মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা ও সিনিয়র বিশেষ জজ-১ এস এম মজিবুর রহমানের আদালত এই আদেশ দিয়েছেন।


গতকাল আদালতে শুরুতেই এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দারের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ এ মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান, শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমি ও জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম ফারুক অভির বিষয়ে তদন্ত করার আবেদন জানান।আইনজীবী সাজ্জাদ বলেন, 'এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক (উইং কমান্ডার) সাহাবুদ্দিন ও হাফিজুর রহমানের জবানবন্দিতে উলি্লখিত ছয় ব্যক্তির নাম এসেছে। হাফিজুর রহমানকে পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন গোলাম ফারুক অভি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা অভির সঙ্গে কথা বলেননি। আর সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ তৎকালে চট্টগ্রাম
সেনা রিজিয়নের প্রধান ছিলেন। চট্টগ্রামে এত বড় ঘটনা ঘটল অথচ তিনি কিছু জানেন না তা হতে পারে না। এ ছাড়া এইচ এম এরশাদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাদিক হাসান রুমি ও সালমান এফ রহমানের নামও আলোচনায় এসেছে। অথচ তাঁদের বিষয়টি প্রতিবেদনে এড়িয়ে গেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। পাশাপাশি অস্ত্র আমদানিতে ব্যবহৃত জাহাজের বিস্তারিত তথ্য এবং অস্ত্র প্রস্তুতকারক দেশ চীনের বিষয়ে যথাযথভাবে তদন্ত হয়নি। এ কারণেও মামলাটির 'পূর্ণাঙ্গ' তদন্ত প্রয়োজন।
আসামিপক্ষের এই বক্তব্যের ঘোর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও মহানগর পিপি কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, 'মামলার বিষয়ে আরো তদন্তের প্রয়োজন হলে তা দেখব। আসামিপক্ষ অভিযোগপত্র গঠনে বিলম্ব করতে এ ধরনের আবেদন করেছে। আমরা অভিযোগ গঠনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।'
এ সময় আদালত আসামিপক্ষের কাছে জানতে চান, 'আপনারা কি মনে করেন এই পর্যায়ে পুনঃ তদন্তের সুযোগ আছে?' জবাবে আইনজীবীরা বলেন, 'আমরা পুনঃ তদন্ত চাইনি। আদালতের মর্যাদা রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছি।'
আদালত পরে জানান, এসব বিষয়ে ১৪ নভেম্বর সিদ্ধান্ত হবে।
আদালত সূত্র জানায়, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা, কয়েকজন আসামির জামিন আবেদনসহ মোট ১২টি আবেদন জমা দেন আদালতে। আদালত এসব আবেদনের শুনানির তারিখও আগামী ১৪ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন।
আসামিপক্ষের তদন্তের আবেদনকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে পিপি কামাল উদ্দিন আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মামলার অভিযোগ গঠনে বিলম্ব ও সময়ক্ষেপণের জন্য তাঁরা এ ধরনের আবেদন করেছেন। এমন আবেদন করার এখতিয়ার তাঁদের নেই।
এর আগে গতকাল সকালে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মূল ও সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে সিইউএফএল জেটি ঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়। ওই ঘটনায় কর্ণফুলী থানার পুলিশ অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে দুটি মামলা করে। তদন্তের পর তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন এবং অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর মামলাটি অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.