মানবতার খোঁজে by শাশ্বতী মজুমদার

ন্যতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে আলোকচিত্র আজ সর্বত্র স্বীকৃত। আলোকচিত্র মানেই মুহূর্ত নির্বাচন। নিয়ত চলমান সময়ের কোন মুহূর্তটি আলোকচিত্রী বেছে নেবেন, তা নির্ভর করে ওই আলোকচিত্রীর ওপর। আলোকচিত্রী নাইমুজ্জামান প্রিন্সের আলোকচিত্রে ধরা পড়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই আর তার জীবনের অর্থ খোঁজার প্রচেষ্টা। বর্তমানে বেঙ্গল গ্যালারিতে শুরু হওয়া নাইমুজ্জামান প্রিন্সের প্রদর্শনীতে ‘সেই সন্ধানে-২’ এর ব্যতিক্রম নয়। প্রদর্শনীতে তাঁর দেশ ও বিদেশের ৭৭টি আলোকচিত্র ঠাঁই পেয়েছে। প্রিন্স মূলত জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে কাজ করেন। প্রদর্শনীর ছবিগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত, কিউবা ও রুয়ান্ডার মানুষের পরিবেশ ও রাজনৈতিক সমস্যা এবং তাদের মুখের হাসিটুকু যেন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের চিরন্তন আশার প্রতীকরূপে বিদ্যমান।

বাংলাদেশে সুন্দরবনে তোলা ছবিগুলোর শিরোনাম ‘ক্লাইমেট ভিকটিমস’। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের একাংশ খরায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। কৃষিজীবী মানুষ তাদের জীবিকার অন্বেষণে বনের আরও গভীরে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে শিকার হচ্ছে বাঘের আক্রমণের। প্রতিবছর সুন্দরবনের প্রায় ১২০ জন মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা যায়।
প্রিন্সের এ ছবিগুলো তাঁর মানবিক বোধের উজ্জ্বল প্রকাশ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গহীন মানুষগুলোর বেঁচে থাকার আকুতি তাদের মানবিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে। আঙুলহীন মায়ের হাতে তাঁর ছেলের ফটোগ্রাফ, তাঁদের সমবেত প্রার্থনা অথবা একাকী কুষ্ঠ রোগীর ভিক্ষার আবেদন আলোকচিত্রীর অনুভূতিময় পর্যবেক্ষণের তীব্র বোধ ও মননের পরিচয় দেয়।
কিউবা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর বাস্তব চিত্রটা কী, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে প্রিন্সের ‘ইভ্যালুশন ইন দ্য রেভ্যুলুশনারি কিউবা’ সিরিজের ছবিগুলো দেখলে, কিউবায় ৫০ বছর আগে বিপ্লব হয়েছে, তার প্রকাশ কিউবার সর্বত্র আজও সমভাবে বর্তমান। ফিদেল ও চে তাঁদের জাতীয় বীর। সর্বত্র শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করা হয়। রাস্তা, দেয়াল, ঘরে—সর্বত্র বিপ্লবের স্লোগান এবং তাঁদের ছবি।
প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ৩ জুন বেঙ্গল গ্যালারিতে এবং চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।

No comments

Powered by Blogger.