মেসি-রোনালদোর রাত

মাদ্রিদেরই ক্লাব হলেও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রায়ো ভ্যালেকানো লিগ ম্যাচ খেলতে এল সাড়ে আট বছর পর। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে অবশ্য কোনো দিক দিয়েই তুলনা চলে না। শিরোপা-সাফল্যের হিসাব বাদই দিন, বার্নাব্যুর দর্শক ধারণক্ষমতা যেখানে ৮০ হাজারেরও বেশি, ভ্যালেকানোর মাঠে দর্শক ঢুকতে পারে মেরেকেটে সাড়ে ১৫ হাজার।
আট বছর পর লা লিগায় ফেরা সেই ভ্যালেকানোর খেলা দেখে পরশু চমকে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। বার্নাব্যুকে হতভম্ব করে মিচু গোল করে বসেন মাত্র ১৫ সেকেন্ডে! শেষ পর্যন্ত স্বরূপে ফিরেই শুরুর এই ধাক্কা সামাল দেয় রিয়াল। ১০ জনের দলে পরিণত হয়েও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকে জিতেছে ৬-২ ব্যবধানে।
রোনালদোর সঙ্গে আবার গোল-দ্বৈরথ চলছে লিওনেল মেসির। রোনালদোর হ্যাটট্রিকের জবাব হ্যাটট্রিকেই দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন জাদুকর। দুই ঘণ্টা পরের ম্যাচে নিজেদের মাঠে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। রোনালদোর তিন গোলের দুটি পেনাল্টি থেকে। আর বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ১২ নম্বর হ্যাটট্রিকটি মেসি করেছেন দুর্দান্ত তিন গোলে। ৮ গোল নিয়ে তিনিই লিগের শীর্ষ গোলদাতা।
শুরুতে বার্সেলোনাও উজানস্রোতে পড়তে পারত। পঞ্চম মিনিটেই তিয়াগোর শট লাগে ক্রসবারে। বার্সা অবশ্য দ্রুতই অ্যাটলেটিকোকে জবাব দেয়। জাভির দুর্দান্ত পাস থেকে ৯ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ডেভিড ভিয়া। মেসিকে গোলবঞ্চিত করতে গিয়ে ছয় মিনিট পর আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হোয়াও মিরান্ডা। ২৬ মিনিটে মেসি স্কোরলাইনটাকে ৩-০ বানিয়ে দিলে ওসাসুনা-আতঙ্কই পেয়ে বসে অ্যাটলেটিকোকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৮-০ হয়নি, তবে ৭৮ ও ৯০ মিনিটে মেসির আরও দুটো গোল বড় জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকদের। অথচ আগের চার ম্যাচে মাত্র এক গোল খেয়েছিল অ্যাটলেটিকো।
ভ্যালেকানোও যে বড় ব্যবধানে হারবে শুরুতে কিন্তু তা মনেই হয়নি। লাসানা দিয়ারার ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথম ২৩ মিনিট আধিপত্য ধরে রাখে ভ্যালেকানোই। রিয়াল কোচ মরিনহোকে তখন দেখা যায় পাশুটে মুখে। দিয়ারাকে ২৯ মিনিটের মাথায় তুলে মেসুত ওজিলকে নামান মরিনহো। খেলাটাই যায় পাল্টে। তবে কাকাও খেলা পাল্টে দেওয়ার আরেক নায়ক।
৩৯ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে রোনালদোর সমতা ফেরানো গোলটি এই ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকারের বানিয়ে দেওয়া। প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে ফ্রি-কিকের পর সার্জিও রামোসের হেডে পাওয়া বলে গোল করেন গঞ্জালো হিগুয়েইন (২-১)। দলকে স্বস্তি দেওয়া তৃতীয় গোলটি রোনালদো করেন ৫১ মিনিটে, পেনাল্টি থেকে। কিন্তু ৫৫ মিনিটেই কর্নার থেকে বক্সে ফাঁকায় পেয়ে যাওয়া বলে মিচু আবার ব্যবধান কমিয়ে দেন। ৩-২ স্কোরলাইনের অস্বস্তিটা আরও বাড়ে হ্যান্ডবলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে ডি মারিয়া মাঠ ছাড়লে। তবে ১০ জনের দল হয়েও রিয়াল গোল করেছে আরও তিনটি—৬৭ মিনিটে ভারান, ৭৩ মিনিটে করিম বেনজামা, ৮৪ মিনিটে আবারও পেনাল্টি থেকে রোনালদো।
আগের তিন ম্যাচে মাত্র এক গোল করায় যে দুশ্চিন্তা ছিল মরিনহোর, সেটা এই ম্যাচেই ঘুচিয়ে দিয়েছে শিষ্যরা। তবে আলাদা করে কাকার প্রশংসাই বেশি করেছেন এই পর্তুগিজ। আর কাকার কথা, ‘শুরুর ২০ মিনিটে আমরা ভালো খেলিনি, তবে এর পরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিই। শুরুতেই অমন একটা গোল খেলে কাজ অনেক কঠিন হয়ে যায়। তবে আমরা যথেষ্ট মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছি। এই ফল আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। আমি নিজেরও অনেক ভালো লাগছে।’
ওদিকে পেপ গার্দিওলার সব প্রশংসা যেন মেসিকে ঘিরেই, ‘মেসিই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। ওর প্রশংসা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ও এমন এক খেলোয়াড়, যাকে কোনো সংজ্ঞা দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায় না।’ কিন্তু মেসির মুখে শুধু সতীর্থদেরই প্রশংসা, ‘সতীর্থদেরই ধন্যবাদ জানাব আমি। আমরা দেখিয়েছি, যখন আমরা ভালো খেলি, আমরা আমাদের ফুটবলটাই উপভোগ করি।’

No comments

Powered by Blogger.