একের বহুত্ব by জাফরিন গুলশান

ভারতীয় চিত্রশিল্পী এস কে শাহজাহান সম্পর্কে উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পী কে জি সুব্রামানিয়ানের বক্তব্য, ‘নির্ভুল প্রতিভা এবং নান্দনিক উৎস।’ ‘একের বহুত্ব’ শীর্ষক একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী হয়ে গেল বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে, ২৩ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত।
শিল্পী শেখ শাহজাহানের ৩৮টি শিল্পকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য-বিষয়ের সরল উপস্থাপন। নর-নারীর দৈহিক অবয়ব সমাজ-সভ্যতায় মানুষের বিবিধ জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক অংশগ্রহণকে খুব পরিকল্পিত রং-রেখার বিন্যাসে ক্যানভাসে উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর ছবিতে নর-নারীর অবয়বের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গি কখনো উড়ন্ত, ভাসমান, সাজানো, একই সঙ্গে বিভিন্ন আঙ্গিকে কম্পোজ করে যে নাটকীয়ভাব তৈরি করেছেন, তা এক রকম ব্যঙ্গাত্মক অনুভূতি বা ফ্যান্টাসি কিংবা স্বপ্নের নির্দেশনা দেয়। তাঁর ছবির ধারালো রেখা প্রধান অনুষঙ্গ সৃজনকে তীব্র ও গতিময় করে তোলে। আবার কখনো ব্যবহূত নকশাধর্মী গোছানো ছন্দময় রেখা ছবির বিষয় ও দর্শকের দৃষ্টিকে পরিমিত নান্দনিক আনন্দ দেয়। শিল্পী ক্যানভাসে বিভিন্ন তলে কাজ করেছেন। কখনো সামনের তলে মানব অবয়ব বিচিত্র দৈহিক ভঙ্গিমায়, পেছনের তলে হয়তো নগরজীবনের স্পর্শকাতর উপস্থাপন অট্টালিকাসদৃশ রেখা চিত্রায়নে। কখনো এমন সবুজ রং, যা প্রকৃতির অনুভূতি দেয়। ‘আনটাইটেলড অ্যাকশন’, ‘আনটাইটেলড রিলেশনশিপ’, ‘ড্রামাটিক অ্যাকশন’ ‘ট্রুলি সিভিলাইজড’, ‘ইটস অ্যান অপসিট ব্যালান্স’, ‘ডিজাইনার পিস’, ‘ওভারল্যাপড স্পেস’, ‘ন্যুড সিটি’, ‘ওয়াইল্ড নেচার’, ‘বেস্ট টু ক্লোজ ইউর আইজ’ ইত্যাদি শিরোনাম তাঁর ছবির। বিষয়াবলি আমাদের চতুষ্পার্শ্ব থেকে আহরিত। চিত্রে প্রতিকৃতি অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর নিজের আত্মপ্রতিকৃতির সঙ্গে মিলে এক রকম ভাব-ভাষা-আবেগে শিল্পীর নিজস্ব অস্তিত্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়। ছবির আকৃতিগত রং-রস, রূপের নাভিমূল মনে হতে পারে ভারতীয় পুরাণ চিত্রকল্পের সূত্র প্রলম্বিত সম্পর্ক।
ভারতীয় শিল্পী শেখ শাহজাহানের ‘একের বহুত্ব’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি সমকালীন বাংলাদেশ ও ভারতীয় চিত্রশিল্পের পারস্পরিক ঐতিহাসিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য কিংবা চলমান গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বাস্তব বিশ্লেষণের অতি ক্ষুদ্র হলেও উপভোগ্য সুযোগ হিসেবে গ্রহণীয় হয়েছে বাংলাদেশের দর্শক ও শিল্পরসিকদের জন্য।
[ শিল্পী এস কে শাহজাহান ১৯৭৪ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। এ পর্যন্ত তাঁর পাঁচটি একক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে এবং বহু দলবদ্ধ প্রদর্শনী ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ‘অভন্তিকা’ পুরস্কার (ব্রোঞ্জপদক) পান।]

No comments

Powered by Blogger.