সুইং-স্বর্গে জহিরবিহীন ভারত

দৃশ্যটা বুধবার সকালের। ট্রেন্টব্রিজের প্যাভিলিয়নের সামনে দুই কোনায় দুজন। দুজনের মুখেই হাসি। তবে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, জহির খানের হাসিটা ফটোগ্রাফারদের জন্য। চোখেমুখে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা। জেমস অ্যান্ডারসনের হাসিটা স্বতঃস্ফূর্ত। ঘিরে ধরা সংবাদকর্মীদের জানিয়ে দিলেন, এক নম্বর জায়গাটা নিজেদের করে নিতে প্রস্তুত ইংল্যান্ড। ট্রেন্টব্রিজ টেস্টের ভবিষ্যৎ লুকিয়ে কি দুজনের ওই হাসিতেই?
অনেক দিন ধরেই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান-বান্ধব উইকেট লর্ডস ও ওভাল, আর ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন এই ট্রেন্টব্রিজ। সবচেয়ে বেশি সুইংও মেলে এখানেই। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ৬ বছরে উইকেট-প্রতি রান ট্রেন্টব্রিজের চেয়ে কম উঠেছে কেবল জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কেই। সর্বশেষ ১০ টেস্টে ১৩ বার ৫ উইকেট পেয়েছেন বোলাররা। এই টেস্টের ভবিষ্যৎ তো বোলারদের হাতেই!
আরও নির্দিষ্ট করে বললে ওই অ্যান্ডারসন ও জহিরের হাতে। শুধু দুই দলের বোলিংয়ের মূল ভরসা বলেই নয়, এই মাঠের পারফরম্যান্সের কারণেও। ৪ টেস্টে এখানে ২৮ উইকেট অ্যান্ডারসনের, ইনিংসে ৫ উইকেটে আছে প্রতি টেস্টেই। আর সর্বশেষ সফরে এই মাঠের জয়েই সিরিজ জিতেছিল ভারত। জয়ের নায়ক? ৯ উইকেট নিয়ে জহির খান! অ্যান্ডারসন যখন প্রিয় মাঠে নামার জন্য টগবগ করে ফুটছেন, জহির তখন ফিজিও আশিস কৌশিকের সঙ্গে মাঠের চারপাশে হাঁটছেন, মাঝেমধ্যে হালকা দৌড়। লর্ডস টেস্ট শেষেই অধিনায়ক ধোনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, শতভাগ ফিট না হলে জহিরকে নামানো হবে না দ্বিতীয় টেস্টে। আজ তাই বাঁহাতি পেসারের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এক নম্বরের ‘যুদ্ধে’ তাই মূল অস্ত্রকে ছাড়াই নামতে হচ্ছে ভারতকে।
জহিরের জায়গাটা নিয়ে লড়াই হবে শ্রীশান্ত ও মুনাফ প্যাটেলের। সুইং করানোর সামর্থ্যটা সহজাত বলে এগিয়ে শ্রীশান্তই। সামর্থ্য অনুযায়ী বোলিং করতে পারলে এই উইকেটে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন কেরালার পেসার। কিন্তু জহিরের বিকল্প কি আর হতে পারেন! সেরা পছন্দের একজনকে সম্ভবত পাচ্ছে না ইংল্যান্ডও। হ্যামস্ট্রিং আর পিঠের সমস্যা ভোগাচ্ছে ক্রিস ট্রেমলেটকে। দীর্ঘদেহী পেসারের তাই এই টেস্টে খেলা না-ও হতে পারে। সেটা আবার শাপে বরও হয়ে যেতে পারে ইংল্যান্ডের জন্য। একাদশে যিনি ঢুকবেন, সেই টিম ব্রেসনান বলকে সুইং করানোর কাজটা ট্রেমলেটের চেয়ে ভালো পারেন!
ভারতের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে সাম্প্রতিক ইতিহাস। এক নম্বরে ওঠার পথে গত এক দশকে অনেকবার প্রথম টেস্ট হেরে পরে দারুণভাবে সিরিজে ফিরেছে তারা। দলে ঢুকেছেন মাত্র এই সেদিন। কিন্তু ওপেনার অভিনব মুকুন্দের কণ্ঠে সেই লড়াকু ভারতের প্রত্যয়, ‘এক নম্বরে ওঠার পথে ভারতকে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সামলে আসতে হয়েছে। এখানেও আমরা চ্যালেঞ্জ নিতেই এসেছি। অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করব।’
বোলিং উইকেটে দু-একজন ব্যাটসম্যানের ভালো পারফরম্যান্স বা দু-একটি বড় জুটি অনেক সময় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। লর্ডস-হতাশা ভুলে শচীন টেন্ডুলকার নিশ্চয়ই চাইবেন, সেই ভাগ্যনিয়ন্তা হতে। জীবনের সেরা ফর্মে থাকা অ্যালিস্টার কুকও নিশ্চয়ই টানা দুই টেস্টে ব্যর্থ হবেন না! সব মিলিয়ে এক নম্বরের ‘যুদ্ধে’ দেখা যেতে পারে আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াই।

No comments

Powered by Blogger.