বেলুচিস্তানে অপহরণ নির্যাতন গুম করছে নিরাপত্তা বাহিনী

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই শত শত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে অপহরণ করে আটকে রাখছে। নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের ওপর।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অপহূত অনেককে মেরে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু লোকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছে।
‘উই ক্যান টর্চার, কিল অ্যান্ড কিপ ইউ ফর ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে কমপক্ষে ১০০ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আছে, যারা বেলুচিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া অপহূত ও নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ বছরের শিশুরা পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছে, যাঁদের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান দেশটির ৪৪ শতাংশ ভূভাগ দখল করে আছে। তেল, গ্যাস, তামা, সোনাসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদে প্রদেশটি সমৃদ্ধ। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এই প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত। আফগানিস্তানের তালেবান নেতারা বেলুচিস্তান ঘাঁটি গেড়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকে অভিযোগ করে আসছে। সরকার বলেছে, আফগান তালেবানের পাশাপাশি স্থানীয় উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী আদিবাসীরাও বেলুচিস্তানে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
বেলুচিস্তানের জাতীয়তাবাদী আদিবাসী নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার এসব সম্পদের খুব কম অংশই এ প্রদেশের মানুষকে ভোগ করার সুযোগ দেয়। বালুচ রিপাবলিকান পার্টির মতো কয়েকটি জাতীয়তাবাদী দল অধিকতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের দমিয়ে রাখতেই নিরাপত্তা বাহিনী এসব অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী কর্মীদের প্রায়ই সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা তুলে নিয়ে যান।
বালুচ রিপাবলিকান পার্টির কর্মী বশির আজিম বলেছেন, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে তিন দফায় তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাঁর ভাষ্য, ‘তাঁরা আমার নোখের ভেতর সুচ ঢুকিয়ে দিত, পিঠের ওপর চেয়ার পেতে বসে পড়ত। একবার আমাকে এমন একটা কক্ষে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া নড়াচড়া করার কোনো সুযোগ ছিল না। যখন তাঁরা আমাকে বাইরে নিয়ে এল, তখন আমার পা দুটো ফুলে গেছে। আমি বাইরে আসার সময় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।’
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাউকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া ধরে আনে না। যাদের ধরে আনে তাদের সময়মতো আদালতে সোপর্দ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.