আরবে

ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ গত শনিবার রাতে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নিয়ে সৌদি আরব গেছেন। ইয়েমেনের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট সালেহ চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবে গেছেন। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভবনে বিরোধীদের ছোড়া গোলার আঘাতে তিনি আহত হন।
তবে সালেহর পতন হয়েছে দাবি করে গতকাল রোববার ইয়েমেনের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাসে মেতে ওঠে। ইয়েমেনের পার্লামেন্টে বিরোধী দল বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট সালেহকে আর দেশে ফিরতে দেবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইয়েমেনের সরকারি একজন কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট সালেহ তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নিয়ে ইয়েমেন ছেড়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়েমেন ছেড়ে যাওয়ার পর তিনিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি জানতে পারেন। তাই প্রেসিডেন্ট সালেহ ঠিক কখন ইয়েমেন ছেড়েছেন, সুনির্দিষ্টভাবে সেই সময়ের কথা জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদি আরবের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, প্রেসিডেন্ট সালেহ শনিবার রাতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছান। তিনি চিকিৎসার জন্য রিয়াদে এসেছেন। চিকিৎসা শেষে আবারও ইয়েমেনে ফিরবেন। প্রেসিডেন্ট সালেহ পদত্যাগ করেননি বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা জানান, সৌদি চিকিৎসা হেলিকপ্টারে করে প্রেসিডেন্ট সালেহকে রিয়াদে আনা হয়। অন্য একটি বিমানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রিয়াদে পৌঁছান।
প্রেসিডেন্ট সালেহ ইয়েমেন ছাড়ায় কে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। কর্মকর্তারা জানান, ইয়েমেনের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সালেহর অনুপস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার কথা ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদেল রাব্বো মনসুর হাদির। রাব্বো এরই মধ্যে সানায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেরাল্ড মাইকেল ফিয়ারস্টেইনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালেহ তাঁর ছেলে আহমেদকে নিজের উত্তরসূরি ভাবতেন।
জানা যায়, প্রেসিডেন্ট সালেহর বড় ছেলে আহমেদ ইয়েমেনেই আছেন। তিনি দেশটির অভিজাত বাহিনী রিপাবলিকান গার্ডের প্রধান। বিরোধীদের দাবি, প্রেসিডেন্ট সালেহর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে আহমেদ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট সালেহর শাসনের অবসান হয়েছে দাবি করে ইয়েমেনে উল্লাস করছে হাজার হাজার মানুষ। সানা বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ারে উল্লাসরত জনতা ‘আজ ইয়েমেন নবজন্ম লাভ করেছে’ বলে সংগীত পরিবেশন করেন। ‘সরকারের পতন হয়েছে’ বলে স্লোগান দেন বিভিন্ন বয়সী শত শত মানুষ। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের মূল কেন্দ্র সানা ইউনিভার্সিটি স্কয়ার। এ স্কয়ারকে ‘চেঞ্জ স্কয়ার’ বলা হচ্ছে।
ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর তায়েজে শত শত মানুষ উল্লাস করে। তারা স্লোগান দেয়, ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, প্রেসিডেন্ট সালেহ পালিয়েছেন।’
পার্লামেন্টে বিরোধী দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ কাহতান বলেন, ‘সালেহর দেশে ফেরা ঠেকাতে আমরা সবাই সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব।’
তবে ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট সালেহর গুণকীর্তন করে সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছে। বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট সালেহ বেশ কয়েকবার পদত্যাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনোবারই কথা রাখেননি।
রাজধানী সানায় গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের মধ্যে একটি মসজিদে গোলার আঘাতে প্রেসিডেন্ট সালেহসহ কয়েকজন আহত হন। নিহত হন ১১ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সরকারবিরোধীরা এই হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট সালেহর ৩৩ বছরের শাসনের অবসানের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা।
ইয়েমেনের নয়জন সেনা নিহত: ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে আবইয়ান অঞ্চলে সন্দেহভাজন আল-কায়েদার জঙ্গিদের পৃথক হামলায় নয়জন সেনা নিহত হয়েছেন। দেশটির সামরিক সূত্র গতকাল এ কথা জানায়।

No comments

Powered by Blogger.