জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে, যা অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিবছরই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ঠিকমতো তাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে কি না, যথাসময়ে ফল প্রকাশ পাচ্ছে কি না, তা দেখার কেউ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সেশনজট ও পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে সেটাই প্রতীয়মান হয়। তাদের মতে, পর্যবেক্ষণ ও আন্তবিভাগীয় সমন্বয়ের অভাবে সেশনজট বাড়ছে এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তারা পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজ তদারকের জন্য একটি কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ছয় শর মতো। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই, অবকাঠামো নেই, নেই শিক্ষার উপকরণও। শিক্ষক না থাকলে সময়মতো পাঠ শেষ হবে না, সময়মতো পাঠ শেষ না হলে সময়মতো পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে একটি কমিটি করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ভাবার কারণ নেই। সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি তাদের জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। এই জাতীয় অপচয় ও ক্ষতির দায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এড়াতে পারেন না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দুর্নীতি পুরোনো ব্যাধি। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির বদল হলেও প্রতিষ্ঠানের চরিত্র বদল হয়নি। মাঝখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিকেন্দ্রীকরণের আওয়াজ উঠেছিল, তা-ও থেমে গেছে। সবকিছুই আগের নিয়মে চলছে।
সারা বছর রাষ্ট্রীয় ছাপাখানায় পাবলিক ও পিএসসির পরীক্ষার খাতা মুদ্রণের কারণেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ছাপার সমস্যার কথা জানিয়েছে কমিটি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের নামে প্রচুর অপচয় করছে। সে ক্ষেত্রে নিজস্ব মুদ্রণযন্ত্রে তারা প্রশ্নপত্র ছাপার ব্যবস্থা করতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে যথাসময়ে ফল প্রকাশ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না। কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.