মিয়ানমারে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সে দেশের চিন প্রদেশের সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। গতকাল বুধবার একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি এ ব্যাপারে তদন্তের দাবি করেছে।
মিয়ানমারের চীন প্রদেশে শত শত পরিবারের ওপর জরিপ চালানোর জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয় ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস নামের সংস্থাটি। জরিপে অনেক পরিবার বলেছে, তাদের স্বজনদের হত্যা, ধর্ষণ বা বাধ্যতামূলক শ্রমে বাধ্য করা হয়েছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ডেসমন্ড টুটু ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাবেক কৌঁসুলি রিচার্ড গোল্ডস্টোন জরিপের এই ফলাফলকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মিয়ানমারের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে পর্যালোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে জেনেভায় বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। এই বৈঠকের আগে ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
গত নভেম্বরে মিয়ানমারে নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবির ব্যাপারে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের নির্বাচন জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করেনি।
সংস্থার ‘লাইফ আন্ডার দ্য জান্তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুরা সামরিক শাসনের অধীনে নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হচ্ছে।
২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ওই জরিপ চালানো হয়। জরিপে ভারত সীমান্তবর্তী চীন প্রদেশের ৬২১টি পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন প্রদেশে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, দলগতভাবে নিপীড়ন ও অন্যান্য অমানবিক কাজসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবার বলেছে, তাদের পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য সামরিক বাহিনী অথবা সরকারের জন্য বিনা মূল্যে শ্রম দিতে বাধ্য হয়েছে।
ছয়টি পরিবার জানায়, তাদের একজন করে স্বজনকে হত্যা করেছে সেনাসদস্যরা। ২৯টি পরিবার জানায়, তাদের স্বজন নিখোঁজ হয়েছে। ২৩টি পরিবার বলেছে, তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ১৭টি পরিবার বলেছে, তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যকে সেনাসদস্যরা ধর্ষণ করেছে অথবা যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ১৭টি পরিবার বলেছে, তাদের পরিবারের একজন শিশুকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা কোনো কোনো শিশুর বয়স মাত্র ১১ বছর।

No comments

Powered by Blogger.