কাশ্মীর- একটি অসমাপ্ত গল্প by আজাদ কাশ্মীর জামান

ক সকালের কথা। প্রতিদিনের চেনা পরিবেশে মোহাম্মদ আশরাফ বের হলেন তার গবাদি পশুগুলো নিয়ে। উদ্দেশ্য ঘাস খাওয়ানো। তার সঙ্গী চৌদ্দ বছর বয়সী ছেলে রিজওয়ান। হঠাৎ এক বিস্ফোরণে এই পরিচিত পরিবেশটির চেহারা বদলে গেলো। আশরাফের হাতের কাস্তেটি ছুটে গিয়ে অনেক উপরে উঠে নেমে এলো নিচের দিকে। আশরাফ মাটিতে পড়ে গেলেন।
চারিদিকে পাথর উড়তে লাগলো। মনে হলো ধূলি ঝড়ের সময় ধূলিকণাগুলো যেভাবে উড়ে বেড়ায় পাথরগুলোও যেন ঠিক তেমনি সহজে উড়ে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলো। এখনো বেঁচে আছেন এটা নিশ্চিত হয়ে আশরাফ মাথা তুললেন। দেখলেন তার গরুগুলো মরে পড়ে আছে। এদের সঙ্গে লাশ হয়ে পড়ে আছে তার কিশোর ছেলে রিজওয়ান।
ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কালিয়ানা এলাকা থেকে আসা বোমা হামলায় ঘটে এ ঘটনা। তারিখ ২৩শে আগষ্ট ১৯৯৭।
পাকিস্তানী সৈন্যরা আশরাফের হাতে একটি স্লিপ ধরিয়ে দেয়। তারা তাতে রিজওয়ানকে চিহ্নিত করে জানায় তার মৃত্যুর ফলে সে শহীদ হয়েছে। চাকোতি এলাকায় শুধু ২৩ আগষ্টেই রিজওয়ানসহ দশ জনের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনা হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের চারশো ষাট মাইল দীর্ঘ সীমান্তে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার একটি। লাইন অফ কন্ট্রোল নামে যে সীমান্ত এলাকা বেশী পরিচিত।
কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। পশ্চিম অংশ আজাদ (মুক্ত) কাশ্মীর হিসাবে পরিচিত। যদিও ভারত এ অংশকে বলে পাকিস্তানের দখলকৃত কাশ্মীর। অন্য অংশ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর যা পাকিস্তানীদের ভাষায়, ভারতের দমিয়ে রাখা কাশ্মীর।
২৬শে অক্টোবর ১৯৪৭- এ কাশ্মীরের মহারাজা ইন্দর মহিন্দর হরি সিং কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটনের কাছে আবেদন। এ নিয়ে দুই পক্ষের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় একই দিন। যার ফলে কাশ্মীর ভারতের নিয়ন্ত্রনে আসে। রাজা হরি সিং তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই এই চুক্তি করেন। কোনো গনভোট এখানে অনুষ্ঠিত হয়নি। ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলেও কাশ্মীর তার নিজস্বতা বজায় রাখার কিছু সুযোগ পায়। তবে কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ স্বাধীনভাবে চলতে গিয়ে বাধা পান। কেন্দ্রীয় সরকার তার বদলে বকশী গোলাম মোহাম্মদকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী করেন।
রাজনৈতিক কারণে সাবেক সোভিয়েত ও চীনের সীমানা থাকায় কাশ্মীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয় ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের কাছেই। আবার কাশ্মীর মুসলিম প্রধান হওয়ায় তাকে নিজেদের কাছে রাখা পাকিস্তানের ইগো-র বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বৃটিশ শিক্ষাবিদ আ্যালষ্টেয়ার ল্যাম্ব লেখেন, ”ভারতীয় দেশীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ছিল একজন হিন্দু মহারাজার অধীনস্থ মুসলমান প্রধান রাজ্য। সে সময়ের সাম্রাজ্যের মুসলিম এবং অমুসলিম অংশে বিভক্ত হওয়ার পেছনে যে যু্ক্তি আছে, তাতে প্রস্তাব করা হয় কাশ্মীরের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।”
অনেকে মনে করেন কাশ্মীর সমস্যা সৃষ্টির জন্য বৃটিশদের দূর্বলতাই দায়ী। তারা এর সঠিক সমাধান করে যায়নি। তবে কাশ্মীর একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসাবে বেঁচে থাকতে চায় এই ধারণাও পোষন করেন অনেকেই।
কাশ্মীরে আরো যে বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে জিম্মি সংকট। সেখানকার নানা বিদ্রোহী গ্রুপ এ ধরনের কান্ড ঘটিয়ে থাকে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে সন্ত্রাসী দল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আজাদ (মুক্ত) কাশ্মীরের একটি দল হারাকাত-উল-আনসার। শ্রীলংকার তামিল টাইগার্সসহ এ এলাকার বড় সন্ত্রাসী দল হিসাবে এটি জায়গা করে নিয়েছে।
কাশ্মীরের জন্য ১,০০০ বছর যুদ্ধ চলবেঃ জারদারি।
পাকিস্তান মুখে কাশ্মীর নিয়ে শান্তির বানী প্রচার করলেও আসলে যে যুদ্ধ্বের নীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে তা আরও একবার পরিস্কার হয়ে গেলে পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কথায়। জারদারি আজাদ জম্মু-কাশ্মীর অ্যাসেম্বলী অধিবেশনে ভাষণ দিতে এসে জানান, কাশ্মীর সমস্যার ব্যাপারে ভারত আন্তরিক হয়ে সমাধান চাইলে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
যে ভাবে ভারত সমাধানের রাস্তা খুঁজছেন তাতে যে বিশেষ কাজ হবে না তা পরিস্কার করে দিয়েছেন জারদারি। এর পরে জানান, সমস্যার সমাধানে আরও এক হাজার বছর লড়াই করতে প্রস্তুত পাকিস্তানের জনগন। তারা যে ভাবে হোক আজাদ কাশ্মীর গঠন করে ছাড়বেন। এর জন্য সমস্ত ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি পাকিস্তানের জনগন।
কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে যখন দিল্লির পক্ষ থেকে আলোচনা আশ্রয় করে রাস্তা খোঁজা হচ্ছে তখন পাকিস্তানের এমন মনোভাব বিষয়কে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে অনুমান। এমন কি ভারত ও পাক বিশেষঞ্জদের অনুমান জারাদারির ঘোষণা পাক মাটিতে যে সকল ভারত বিরোধী জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে তারা আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।
এদিকে জারদারির এই মন্তব্য নিয়ে সরাসরি ভাবে এখন কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি দিল্লি। তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে পাক অভ্যন্তরীন রাজনীতি কোনঠাসা জারদারি নিজের উপরে চাপ কমাতে এমন মন্তব্য করেছেন।
কাশ্মীরের ইতিহাস নিয়ে বিখ্যাত প্রাচীন বই ‘রাজতরঙ্গিনী’-তে এর লেখক কুলহান লিখেছিলেন, “মানুষের কামনা বাসনা শেষ হলে পুনর্জন্ম বন্ধ হয় এবং মানুষ মুক্তি অর্জন করে।”
কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য কতো বার জন্মগ্রহন করতে হবে?
=========================
মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের  ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার  শিক্ষা আসলে কোনটা  জীবন ব্যাকরণঃ হিরালি  ন্যাটো ও রাশিয়ার সমঝোতা ইরানের ওপর কি প্রভাব ফেলবে  জার্নি বাই ট্রেন  পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা


শব্দ নীড় ব্লগ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আজাদ কাশ্মীর জামান


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

1 comment:

  1. আমি ভীষন খুশি হয়েছি এই ব্লগটি দেখে। ব্লগের গেটআপ সেটিং চমৎকার।
    পাশাপাশি গর্ববোধ করছি আমার একটি লিখা আপনারা শেয়ার করেছেন।
    অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

    আজাদ কাশ্মীর জামান
    http://azadkashmirzaman.wordpress.com/
    http://www.shobdoneer.com/murubbe/

    ReplyDelete

Powered by Blogger.