ভ্রমণ- চীন দেশের কথা by লিয়াকত হোসেন খোকন

বিমানে চীনে যাওয়া যায়। মাও সেতুংয়ের দেশ বলে চীনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। উন্নত দেশ বলেই চীনের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বেজিং, শিয়ান, গুইলিন, সাংহাই প্রভৃতি চীনের উলেস্নখযোগ্য স্থান। কুনমিং হয়েও বিমানে যাওয়া যায় বেজিংয়ে। এখানে এসে অনেকেই বিশ্রাম নেন। দু'তিনদিন অবস্থান করে দেখে নেয়া যায় তিয়েন আন মেন স্কোয়্যার, ফরবিডন সিটি, সামার প্যালেস, জিয়ুং পাসের সুবিখ্যাত চীনের প্রাচীর, মিং রাজাদের ধ্বংসাবশেষ,
টেম্পল অব হেভেন, আন সিউ বাজার, জেড পাথরের কারখানা, স্বর্গের মন্দির, পেই থাই পার্ক, পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াং ফুচিং মল, মুক্তোর বাজার, পেইচিং বুক বিল্ডিং প্রভৃতি আরও কত কি সব। বেজিংয়ে ইউথ হোস্টেলের ভেতরে টু্যর কোম্পানির অফিস আছে। এরা টু্যরের ব্যবস্থা করে থাকে। বেজিং শহর বাসে বাসে ঘুরে দেখা যায়। বাসে করে ঘুরলে খরচ কম পড়বে। চীনের বাস পরিবহন ব্যবস্থা বেশ ভালো। মেট্রো ট্রেনের ব্যবস্থাও ভালো ভাড়া খুবই কম।
শিয়ান এক আকর্ষণীয় শহর। এখানে দেখা যাবে_ শান মিউজিয়াম, পুরনো শিয়ান শহর, বেল টাওয়ার, চাইনিজ বাজার, সৈনিকদের টেরাকোটা সমাধি ক্ষেত্র, নগর প্রাচীর, বিশাল ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডা প্রভৃতি।
শিয়ান থেকে বিমানে চড়ে যেতে হবে সাংহাই। এখানে দেখা যাবে পিপলস স্কোয়্যার, গুয়াংসু আমলে তৈরি জেড বৌদ্ধ মঠ, তাও মন্দির, ওরিয়েন্টাল টিভি টাওয়ার প্রভৃতি।
বেজিং থেকে হংকং আবার হংকং থেকে বেজিংয়ে ট্রেনে যাওয়া যায়। হংকং থেকে চীনে বাসে যেতেও বাধা নেই। তবে হংকংয়ের ভিসা হংকং বিমানবন্দরে পেঁৗছেও করা যেতে পারে। হংকংয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ঘুরে দেখতে পারেন। যা দেখবেন তাই যেনো কিনতে ইচ্ছে হবে। হংকংয়ের যে কোনো মার্কেটে গেলে এমনটিই হয়। হংকং গিয়ে সন্ধ্যার পর ভিক্টোরিয়া বন্দরে যেতে পারেন। রাতে হংকংকে মনে হবে এক রূপসী নগরী। আলোর রোশনাই আর যন্ত্রসংগীতের অনুষ্ঠান দেখতে সমুদ্রপাড়ে বহু মানুষের ভিড় হয়। হংকংয়ের উলেস্নখযোগ্য দর্শনীয় হলো_ মিউজিয়াম অব আর্ট, মিউজিয়াম অব হিস্ট্রি, সায়েন্স মিউজয়াম, বুদ্ধ মন্দির, কালচারাল সেন্টার, ক্লক টাওয়ার।
শিম শা গুইয়ে এলাকায় আছে চুমকিন ম্যানসন এবং মিরাডোর ম্যানসন_ বহুতল অট্টালিকা, প্রচুর অ্যাপার্টমেন্ট, বিশাল বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে নিচতলা ব্যবসা কেন্দ্র, তার ওপরে সব থাকার ব্যবস্থা। খুব কম ভাড়ায় রুম পাওয়া যায়। হংকংয়ে ঘুরতে ঘুরতে পথেই দেখতে পাওয়া যায় বাঙালিদের। এরা ঘোরাফেরা করছে, কেউবা হোটেল দেখিয়ে অর্থ উপার্জনও করছে। ওরাই টু্যরিস্টদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ৭০ থেকে ৮০ হংকং ডলারে। শিম শা গুই এলাকায় খাবারের দেকান বিস্তর আছে, ইন্ডিয়ানদের দোকান বিস্তর আছে। ভাত, মাংস, সবজি, মাছ সবই মিলবে।
চীনে গিয়ে চীনাদের রান্না করা খাবার খেতে পারেন। চীনারা খায় না এমন জিনিস নেই। এদের রান্নার বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এত সুস্বাদু যে বলে না দিলে কেউই বুঝতে পারবেন না কিসের মাংস খাচ্ছেন। 'পাও' নামে একরকম গোল রুটি এখানের সাধারণ মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। এই রুটির রং সাদা। দাম এক উয়ানে দু'টো। এই রুটি গরম গরম বিক্রি হয়। এটি কিনবার জন্য রেস্টুরেন্টের সামনে বিরাট লাইন পড়ে যায়।
সন্ধের পর চীন আর হংকংয়ের প্রতিটি বাজার জমে ওঠে। ওয়া ফু চিং বাজার বেশি আকর্ষণীয়। এই বাজারটি এত বড় যে, একদিনে দেখে শেষ করা যাবে না। চোখ যেনো ধাঁধিয়ে দেয়। কত বিচিত্র জিনিস এই বাজারে পাওয়া যায়_ তার হিসেব নেই। বাজারের প্রতিটি সমগ্রী চীনের বশেষত্বে ভরা। এখানে অসুস্থ শরীরকে সুস্থ করার জন্য বিচিত্র ধরনের সব বৈদু্যতিক যন্ত্রপাতি, খেলনা, পোশাক, খাবার সবই পাওয়া যায়। এখানে কিনতে এসে দরাদরি করে কেনাই ভালো, নচেৎ ঠকতে হবে। দরাদরিতে অসম্ভব রকম দাম কম বললেও দোকানদারেরা কখনও রাগ করে না।
খনিজ তেল উৎপাদনে চীন প্রসিদ্ধ। প্রাকৃতিক গ্রাসও উত্তোলন হয় এখানে। চীনে প্রচুর তামা পাওয়া যায়। টিন আর সোনার জন্যও চীনের খ্যাতি আছে। লোহা ও ইস্পাত উৎপাদনে চীন চতুর্থ স্থানে আর বস্ত্র উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছ এখন। পশম শিল্পেও প্রসিদ্ধ চীন। বেইজিং হলো চীনের রাজধানী। এই নগরীর বাণিজ্য ও শিল্প কেন্দ্র হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছে। ইয়াং সিকিয়াং নদীর মোহনায় অবস্থিত সাংহাই। এটি চীনের সর্বপ্রধান শহর। বন্দর ও শিল্পকেন্দ্র স্থান এই সাংহাই।
মধ্যযুগীয় (৫০০-১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ) সপ্তাশ্চর্যের ২টি রয়েছে চীনে। যেমন দি গ্রেট ওয়াল অব চায়না এবং নানজিং-এর চীনা মাটির বুরুজ। চীনের প্রাচীরটি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী হতে ১৬শ খ্রিষ্টাব্দ অবধি দীর্ঘকাল ধরে পাথরখণ্ড এবং মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা দুর্গ প্রাকার। জুয়ান নামক স্থান হতে শুরু করে প্রায় ৬৪০০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ প্রচারটি লুপনুর নামক স্থান পর্যন্ত প্রসারিত। এটি চীনের কয়েকজন সম্রাট ধারাবাহিক-ভাবে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ করান বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ হতে দেশকে রক্ষার জন্য। চীনা মাটির বুরুজ নির্মাণ করান ১৫শ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন চীন সম্রাট ইয়ংলি। এটি সাদা রংয়ের চীনামাটির ইট দিয়ে নির্মিত। দিনের বেলা এটিতে সূর্য কিরণ প্রতিফলিত হতো, এটি প্রায় ২৬০ ফুট উঁচু। ৯ তলাবিশিষ্ট প্যাগোডা আকৃতির বুরুজ। রাতেরবেলা বুরুজের শীর্ষদেশ থেকে ১৪০টি প্রদীপ ঝুলিয়ে দেয়া হতো এটিকে আলোকিত করার জন্য।
============================
হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের  ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার  শিক্ষা আসলে কোনটা  জীবন ব্যাকরণঃ হিরালি  ন্যাটো ও রাশিয়ার সমঝোতা ইরানের ওপর কি প্রভাব ফেলবে  জার্নি বাই ট্রেন  পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা  সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না  স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ লিয়াকত হোসেন খোকন

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.