ফুটবল উৎসবের সকাল

তাসমিয়া আগে কখনো কক্সবাজার স্টেডিয়ামে আসেনি। কাল সকালে স্টেডিয়ামে ঢুকে পঞ্চম শ্রেণীর এই ছাত্রী তো অবাক! এত কাছ থেকে খেলোয়াড়দের দেখতে পাবে, সেটা যে কল্পনাতেও ছিল না তার! শুধু কাছ থেকে দেখা নয়, তাসমিয়ার মতো ৭০ জন বালিকা কাল বাংলাদেশ মহিলা দলের ফুটবলারদের সঙ্গে মেতে উঠেছিল ফুটবল-আনন্দে। তারা খেলল সাফ মহিলা ফুটবলের সেমিফাইনালে ওঠা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের সঙ্গে।
উদ্যোগটা ফিফার। ফুটবলের প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের আগ্রহ বাড়াতেই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মাঝে এমন আয়োজন, জানালেন ফিফার কনসালটেন্ট রোলান্ড আর্নকভিস্ট।
প্রীতি ম্যাচ শুরুর আগে বালিকাদের দলটার প্রতীকী নাম দেওয়া হয় ‘রোজ বার্ড’। পরে তাদের এ, বি, সি, ডি—আটটি উপদলে ভাগ করা হয়। রোলান্ড আর্নকভিস্ট এই ফুটবল-উৎসবকে দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে, ‘নিঃসন্দেহে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। সারা দেশেই এমন ফুটবল জাগরণ হওয়া উচিত।’ সুইডেনের ৪৭ বছর বয়সী ভদ্রলোকের জন্মদিন ছিল কাল। জন্মদিনে বিস্ময় ‘উপহার’ পেলেন তিনি, হুট করে যখন উৎসবে উপস্থিত হলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রোলান্ড জানালেন, ‘এ অনুষ্ঠানে একজন সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান এসেছেন ভেবে ভীষণ ভালো লাগছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলীয় কাজে কক্সবাজারে এসেছিলেন। আগে থেকেই জানতেন এখানে চলছে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। কাল কোনো খেলা নেই জেনেও স্টেডিয়ামে এলেন বালিকাদের প্রদর্শনী ফুটবল দেখতে। সেই সঙ্গে উৎসাহ দিলেন বাংলাদেশের মেয়েদের, ‘বাংলাদেশ যে প্রথম সাফ মহিলা ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠেছে সেটা আমি জানি। আশা করি, মেয়েরা ভালো খেলবে। তবে আমাদের মেয়েদের শারীরিক ফিটনেস, স্টামিনা আরও বাড়াতে হবে।’
ফিফার এমন আয়োজনকে স্বাগত জানালেন বাংলাদেশের স্ট্রাইকার অম্রা, ‘আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এভাবে খেলতে খেলতেই ছোট ছোট মেয়েরা ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে ওরা আমাদের জায়গা নেবে, আরও ভালো ফুটবলার হিসেবে উঠে আসবে; এটাই প্রত্যাশা।’ পাকিস্তানি স্ট্রাইকার মেজগানের মুখেও একই কথা, ‘পাকিস্তানে মেয়েদের ফুটবলে সেভাবে উৎসাহ দেওয়া হয় না। এই উদ্যোগ ছোট মেয়েদের মনে বেশ প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে ওরা ফুটবলের দিকে ঝুঁকবে।’
প্রদর্শনী ম্যাচ শেষে মেয়েরা ছবি তুলল, মজা করল খেলোয়াড়দের সঙ্গে। অটোগ্রাফ নিতেও দেখা গেল অনেককে। ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক পিউমার পক্ষ থেকে প্রতিটি মেয়েকে দেওয়া হয় জার্সি, কেডস, মোজা। স্থানীয় ১৫টি স্কুলকে দেওয়া হয় একটি করে ফুটবল। উপহার পেয়ে খুশি মনেই বাড়ির পথ ধরল ‘রোজ বার্ড’রা। কে জানে, এখান থেকেই হয়তো বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের অম্রা, সাবিনা কিংবা একজন সুইনু।

No comments

Powered by Blogger.