আলোচনা- সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না by আফতাব চৌধুরী

প্রতিবন্ধী শব্দটা অভিশাপ হলেও কোন কোন মায়ের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অসতর্কতার কারণেই জন্ম নেয় প্রতিবন্ধী শিশু। বয়সের অনুপাতে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হলে শিশু শারীরিকভাবে হয় স্বল্প বুদ্ধির। এদেরকে 'প্রতিবন্ধী শিশু' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না বলে এ সব শিশু নিজেদের ব্যাপারে থাকে উদাসীন, পিছিয়ে পড়ে সমবয়সী শিশুদের থেকে। প্রতিবন্ধী শিশুরা অনেক সময় পরিবারের বোঝা হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাবার পিছনে নিজেদের কোনও হাত বা ইচ্ছা থাকে না। অথচ এরা সমাজ ও জাতির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য সচেতনতার মাধ্যমে রুখে দেয়া যায় প্রতিবন্ধী শিশুর আগমন, তেমনি প্রতিবন্ধী শিশুকেও সফল জীবন যাপনে সাহায্য করা যায়।
শিশুর প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ: * শিশু গর্ভে থাকাকালীন মা যদি হাম, সিফিলিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয় তাহলে শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। * গর্ভবতী মা যদি সন্তান গর্ভে থাকাকালীন থ্যালামাইড, অতিরিক্ত ভিটামিন-এ, মেট্রোনিডাজল, স্টেরয়েড বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন, তবে এ সবের প্রতিক্রিয়ায় গর্ভস্থ শিশু শারীরিক, মানসিক উভয় দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। * গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির মারাত্মক অভাব হলে শিশুর বৃদ্ধির বিকাশ ক্রটিপূর্ণ হতে পারে। মা যদি আয়োডিনের অভাবে ভোগেন তাহলে শিশুটির প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাবার সম্ভাবার থাকে বেশি। এ ছাড়া জন্মের পরও শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগলে শিশুর বৃদ্ধির বিকাশ ব্যাঘাত ঘটে। ভিটামিন-এ'র অভাবে শিশু অন্ধ হতে পারে। আয়োডিনের অভাবে শিশু বেঁটে ও শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে। * গর্ভবতী মাকে বার বার এক্স-রে করানো হলে এর রঞ্জক রশ্মির প্রভাবে শিশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। * মায়ের রক্তের উপাদান যদি আর এইচ নিগেটিভ হয়, আর সন্তানের রক্তের উপাদান আর এইচ পজিটিভ হয় তখন গর্ভফুলের মধ্য দিয়ে শিশুর রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করলে মায়ের রক্তে কিছু প্রতিরক্ষাজনিত বিক্রিয়া ঘটে। এতে শিশু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভে মারা যায় আবার কখনও কখনও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মায়। * মায়ের গর্ভে থাকাকালীন শিশু মায়ের রক্ত থেকে অক্সিজেন পায়। কিন্তু ভূমিষ্ঠ হলে নিজেই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন সংগ্রহ করে। কোনও কারণে এ অক্সিজেন গ্রহণে বাধা ঘটলে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। * এখনও গ্রামে-গঞ্জে অনভিজ্ঞ দাই-এর সাহায্য নিয়ে শিশু প্রসব করানো হয়, যা অনেক সময় শিশুর জন্য মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। যদি শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পথে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে মাথায় রক্তক্ষরণ হতে পারে আবার প্রসব পথ শিশুর উপযোগী না হলে শিশুর মাথায় প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এসব কারণে অক্সিজেনের অভাব হয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এতে সুন্দর ফুটফুটে শিশুটি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাতে পারে। * শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে, এতেও মানসিক প্রতিবন্ধকতা শিশুর মধ্যে দেখা যেতে পারে। * এছাড়া বংশগত কারণেও সন্তান মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে। ডাউন সিন্ড্রোমে শিশুদের ক্ষেত্রে এরকম হয়। তবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে মায়ের বয়সের সম্পর্ক আছে। মায়ের বয়স ৩৫-এর ঊধের্্ব হলে এ রকম শিশু জন্মাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। * কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কম হতে পারে। ৩৭ সপ্তাহের বা ২.৫০০ কিলো গ্রামের কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পূর্ণ হয় না। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে বা শিশু নির্মম প্রহারের শিকার হলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। * থাইরয়েড গ্রন্থির নিঃসরণে শিশুর দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বিরূপ পারিপাশ্বর্িক অবস্থা, উপযুক্ত পারিবারিক পরিবেশের অভাব, বাবা-মায়ের বিকাশকে বাধা দেয়। এতে শিশুর বুদ্ধিমত্তা কমে যায়।
উপরোক্ত কারণগুলোকে লক্ষ্য করে গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত যদি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন তাহলে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মহার অনেকটা কমে আসবে। হাতুড়ে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে প্রয়োজন রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও এক্স-রে করাতে হবে গর্ভবতী মাকে। এ ছাড়া গর্ভবতী মাকে ও শিশুকে নিয়মিত টিকা নিতে হবে। গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টি ও মানসিক শক্তির জন্য পরিবারকে সচেতন হতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়েদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। আয়োডিনের অভাব যাতে শরীরে দেখা না দেয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। সুস্থ, সবল শিশুর জন্য গর্ভবতী মায়েদের সুন্দর-সুস্থ পরিবেশে থাকা চাই। সে সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় যেন কোনও মা অবসাদগ্রস্ত না হন কেননা তা গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। কিন্তু একটু সচেতনতা অবলম্বন করলে এ হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি রোধ করা যায়। প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে পরিবার ও সমাজের বোঝা না ভেবে তাদেরকে সাহায্য করা প্রয়োজন। এদের প্রতিবন্ধকতার কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করালে অনেক ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। আজকাল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগও রয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের বোঝা না ভেবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলে এবং আগামীতে যাতে একটি শিশুকে প্রতিবন্ধী হয়ে না জন্মাতে হয় এজন্য উপযুক্ত সতর্কতা ও ব্যবস্থা অবলম্বন প্রয়োজন।
=======================
স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস  বিচারপতিদের সামনে যখন ‘ঘুষ’  কয়লানীতিঃ প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর  শ্বাপদসংকুল পথ  মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম  ১২ বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে  চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘর্ষে নিহত ৪  ড. ইউনূস : প্রতিটি বাংলাদেশির গৌরব  জলাভূমিবাসীদের দুনিয়ায় আবার..  আসুন, আমরা গর্বিত নাগরিক হই  স্মৃতির শহীদ মির্জা লেন  ইয়াংওয়ান গ্রুপের পোশাক কারখানা বন্ধ  ট্রানজিটে ১১ খাতের লাভ-ক্ষতির হিসাব শুরু  চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি  ট্রেন  স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি  মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার  মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে দেশে  ক্ষমতা যেভাবে মানবাধিকার আর ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করে  চাক্কু মারা 'মশা' কাহিনী  উল্কির ভেলকি  এইচআইভি/এইডস্  উইকিলিকসঃ জুলিয়ান চে গুয়েভারা!  তিন কালের সাক্ষী  বাবর আলীর ইশকুল  এ মাটির মায়ায়  মধ্যবিত্তের উত্থান, না ভোক্তাশ্রেণীর উদ্ভব  হিমালয়ের পায়ের কাছেঃ গোধূলির ছায়াপথে  পতিত স্বৈরাচারের আস্ফালন ও আওয়ামী লীগের নীরবতা  ৪০ বছর পড়ে থাকা লাশটার সৎকার করতে চাই  এই কি আমাদের মানবাধিকার?  ঐতিহ্যের মধ্যে সমকাল  কেমন দেখতে চাইঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা  দ্রীপ প্রতিভার দ্যুতিময় স্মারক  গল্প- বৃষ্টি  শহীদুল্লা কায়সারঃ রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতা  আনোয়ার পাশাঃ জাতিরাষ্ট্রের অংশ ও প্রেরণা  মুনীর চৌধুরীঃ তাঁর নাটক


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.