জনপ্রিয়তা উদ্ধারের চেষ্টা সারকোজির বিক্ষোভ থামার ইঙ্গিত নেই

ফ্রান্সে সরকারের পেনশন সংস্কার কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থামার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জনমত জরিপের ফল থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, নতুন সপ্তাহে আরও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে পারে। এদিকে পেনশন সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েছে, তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি।
প্রেসিডেন্ট সারকোজির সরকারের নেওয়া পেনশন সংস্কার কার্যক্রমে সরকারি কর্মীদের অবসর নেওয়ার বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর এবং পূর্ণ অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার বয়সসীমা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সে দেশের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ-সংক্রান্ত বিলটি অনুমোদন পায়। এর আগে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষও বিলটি অনুমোদন করে। আজ সোমবার পার্লামেন্টের দুই কক্ষে অনুমোদন পাওয়া বিলের খসড়া সমন্বয় করে সেটিকে আইনের খসড়ায় রূপান্তর করা হবে। সরকার আশা করছে, আগামী বুধবার চূড়ান্ত খসড়াটি জাতীয় পরিষদের অনুমোদন পাবে।
সরকারের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ, সমাবেশ, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে ফ্রান্সের বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ। তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সব কটি তেল শোধনাগারে শ্রমিক-কর্মচারীদের ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে তেল সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশের প্রতি চারটি পেট্রলপাম্পের একটি ছিল জ্বালানি তেলশূন্য। আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলছে।
সাপ্তাহিক জেডিডি পত্রিকায় প্রকাশিত জনমত জরিপের ফল থেকে দেখা গেছে, প্রথমবারের মতো সারকোজির জনপ্রিয়তা ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ ও শিক্ষার্থীরা আরও দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তেল শোধনাগারগুলোতে ধর্মঘট অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। কাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। শ্রমিক সংঘগুলো দেশজুড়ে কাল মঙ্গলবার সপ্তমবারের মতো এক দিনের ধর্মঘট আহ্বান করেছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার সমাবেশ আহ্বান করেছে।
এদিকে ২০১২ সালের নির্বাচনের আগে নিজের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের জন্য মন্ত্রিসভায় রদবদল আনছেন নিকোলা সারকোজি। এ ছাড়া উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সভাপতি হিসেবে ফ্রান্সের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি।
সরকারের ভেতরের সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী মাসে শ্রম, পরিবহন, পররাষ্ট্র ও বাজেট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পরিবর্তন আনতে পারেন সারকোজি। একই মাসে জি-২০-এর দায়িত্ব নেবে ফ্রান্স। সারকোজি আশা করছেন, এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রা বিনিময় হার ও পণ্যের দাম নির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, যা তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া দেশে করব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। অবশ্য এ ব্যাপারে বিরোধী দলের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়তে হতে পারে সারকোজিকে।
পেনশন-ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে সারকোজি বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বাজেট ঘাটতি সামাল দেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। তিনি আশা করছেন, চলতি সপ্তাহে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ থিতিয়ে আসবে।

No comments

Powered by Blogger.