মাঠের বাইরে অন্য লড়াই

ক্রাচে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে যাচ্ছেন কেউ। পাশ থেকে হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক ‘রোগী’ দরজা সামান্য ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দিলেন ডাক্তার সাহেব আছেন কি না দেখতে। একটু পর দেখা মিলল জিন্স-টি শার্ট পরা এক কেতাদুরস্ত তরুণের। ব্যান্ডেজ লাগানো হাতের আঙুল উঁচিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন। আশপাশে দর্শনার্থীও কম নেই।
সবই ঠিক ছিল, ছিল না শুধু স্যাভলনের ঝাঁজালো ‘ঔষধি’ গন্ধটা। নইলে কাল বিকেলে বিসিবির মেডিকেল রুমের সামনের করিডরটাকে মনে হচ্ছিল কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়েটিং রুম!
সিরিজ শুরুর আগেই ছিটকে পড়েছেন তামিম। মাশরাফি-নাজমুলকে কেড়ে নিয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। দল থেকে ছিটকে গিয়ে আজকের মধ্যে হোটেলও ছেড়ে দেবেন তাঁরা। বাংলাদেশ দলে জয়ের আনন্দ আর হারানোর বেদনা এখানে মিলেমিশে একাকার। কাল অনুশীলনে আসা ক্রিকেটার আর চিকিৎসার জন্য আসা ক্রিকেটার তাই প্রায় সমান সমান। আগের দিন খেলা ছিল, পরের ম্যাচের আগে দুই দিন বিরতি। কালকের অনুশীলনটা ঐচ্ছিকই রেখেছিলেন কোচ জেমি সিডন্স। সাকিব আল হাসান দুপুরের দিকে বিসিবিতে এক চক্কর দিয়ে চলে গেছেন বিকেএসপিতে। উদ্দেশ্য, বিকেএসপির অসুস্থ এক ছাত্রের হাতে তুলে দেবেন প্রথম ওয়ানডেতে পাওয়া ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার ১ হাজার ডলার। সঙ্গে সতীর্থদের কাছ থেকেও নিয়ে গেছেন কিছু অর্থ সাহায্য।
বাকিদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনই এলেন অনুশীলনে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টা দুয়েকের অনুশীলন, এর মধ্যেই রাজশাহী থেকে সরাসরি স্টেডিয়ামে এসে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুই পেসার সৈয়দ রাসেল ও ডলার মাহমুদ। রাসেল তো খুবই আশাবাদী সুযোগ পেলে ভালো কিছু করে দেখাবেন, ‘জাতীয় লিগ খেলছিলাম। এর আগে অনুশীলনে...খেলার মধ্যেই ছিলাম। আমার বিশ্বাস সুযোগ পেলে ভালোই বল করব।’ ইনজুরিতে পড়া বোলারদের পরিবর্তক হিসেবে আসা রাসেল নিজেও ইনজুরিপ্রবণ। ব্যাপারটা মাথায় রেখে এবার একটু সতর্ক থাকবেন বলে জানালেন। রাসেল-ডলার দুজনই রাজশাহীতে খুলনা বিভাগের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলছিলেন। আগের রাতে ঢাকা থেকে তাঁদের দলের সঙ্গে যোগ দিতে বলা হলে কাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুই পেসার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
মাশরাফি-নাজমুল না থাকলেও নতুন দুজনকে পেয়ে অন্তত চার পেসারের কোটা পূরণ হলো। পরিস্থিতির দাবি মেনে আপাতত এতেই খুশি বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট, ‘রাসেল-ডলার দুজনকেই এর আগে অনুশীলনে দেখেছি। আজ (গতকাল) তারা যোগ দেওয়ায় আমরা আবার চারজন পেস বোলার পেলাম। দেখে সবাইকেই খেলার মতো ফিট মনে হচ্ছে। শফিউলের একটু সমস্যা ছিল। আশা করছি, সে ফিট হয়ে যাবে।’ বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই জয় দেখলেন। তাঁর কাছে এটা ‘অপ্রত্যাশিত’ হলেও বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ হিসেবে শুরুটাকে ‘চমৎকার’ বলছেন পন্ট। তবে ইনজুরির কারণে যেভাবে একটার পর একটা পেসারদের ‘উইকেট’ পড়ছে, তাতে চিন্তিত না হয়ে উপায় কি ইংলিশ কোচের! যদিও এসব চোটের ব্যাখ্যা আছে তাঁর কাছে, ‘কঠোর অনুশীলন চলছে। সে কারণে কিছু ইনজুরিও হচ্ছে। ফাস্ট বল করলে কখনো কখনো ইনজুরিতে পড়তে হয়। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলো, এক ম্যাচেই দুজন পেসার ইনজুরিতে পড়েছে। এটা বিরল ঘটনা।’
ইনজুরির ব্যাখ্যায় বোলিং কোচের সঙ্গে একমত অধিনায়ক মাশরাফিও, ‘গত দুই মাস আমরা খুব কঠিন অনুশীলন করছি। এ ধরনের অনুশীলনে আমরা অভ্যস্ত নই। ইনজুরির এটাও হয়তো একটা কারণ। তবে এই অনুশীলন আমাদের খুবই কাজে লাগছে। আর ইনজুরি তো সবই ছোটখাটো।’
মাশরাফি বরং সবাইকে চাঙা করারই চেষ্টা করছেন, ‘মন খারাপ করার কিছু নেই। জিতেছি...সবার উৎফুল্ল থাকা উচিত। স্পিন আক্রমণে কোনো সমস্যা হলে বরং বেশি চিন্তিত হতাম। যেকোনো দলকেই আমরা স্পিন দিয়ে আক্রমণ করতে চাই। আর নিউজিল্যান্ড স্পিনে অত শক্তিশালীও না। সে ক্ষেত্রে সাকিব, রাজ (রাজ্জাক) বা সোহরাওয়ার্দীদের কেউ ইনজুরিতে পড়লে বেশি সমস্যা হতো।’
দলের মন ভালো করার একটা দায়িত্ব মাশরাফি নিজেই নিয়েছেন কাল। প্রথম ওয়ানডের জয় উদ্যাপন করতে ম্যানেজার তানজীব আহসানের সঙ্গে মিলে একটা পাঁচ তারকা হোটেলে নৈশভোজ করিয়েছেন পুরো দলকে।

No comments

Powered by Blogger.