জ্বলছে নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা আন্তরিক মানুষ নন, এমন অভিযোগ তাঁদের পরম শত্তুরেও করবে না। অনুশীলনে জীবন যায়-যায় অবস্থাতেও সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিতে জুড়ি নেই তাঁদের। অথচ কাল ড্যারেল টাফির দিকে যেতেই মাছি তাড়ানোর মতো একটা ভঙ্গি করলেন। যার অর্থ, কোনো কথা চলবে না।
তাহলে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা কি রাতারাতি অসামাজিক হয়ে পড়লেন! নাকি একটা হারের ধাক্কায় রাতারাতি খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন? দলের তরুণতম সদস্য কেন উইলিয়ামসন একটা ব্যাখ্যা দিলেন, ‘আসলে সবার মনই খুব খারাপ। কাল ম্যাচ শেষে সবাই ড্রেসিং রুমে খুব মন খারাপ করে বসে ছিল। এই সফরের প্রথম ম্যাচেই আমরা হেরে যাব, এটা কেউ কল্পনা করেনি।’
তা, নিউজিল্যান্ডের জন্য একটু ‘কল্পনাতীত’ ব্যাপার ঘটে গেছে বৈকি! যে দলটির বিপক্ষে প্রথম ১১টি ওয়ানডের সবগুলোতে জিতেছে তাঁরা, যে দলের বিপক্ষে পরশুর আগ পর্যন্ত ১৭ ওয়ানডেতে একটি মাত্র হার, সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে আরেকটি পরাজয় মেনে নেওয়া তো কষ্টই।
ইচ্ছে করলে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে বলতে পারেন, হারের ধকল কাটাতেই কাল সকালে হোটেলে রয়ে গেলেন নিউজিল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়েরা। সকালবেলায় মিরপুর স্টেডিয়ামে সূচি অনুযায়ী অনুশীলনে এলেন মাত্র সাত-আটজন।
যাঁরা এলেন, তাঁদের কথায় ‘কমন’ সুর একটাই—নিউজিল্যান্ড ধাক্কা খেয়েছে, তবে এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে সিরিজ জয়ের ব্যাপারে তারা খুবই আশাবাদী। ‘বলব না, বলব না’ করেও মাঠ ছেড়ে বেরোনোর আগে টাফি বললেন, ‘এখনো চার ম্যাচ বাকি আছে। সিরিজ জেতার ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি আশাবাদী।’
প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে হারের পর আশা ছেড়ে দেওয়ার তো কোনো কারণই নেই! কেন উইলিয়ামসনও এই আশার কথাই বললেন, ‘পরের ম্যাচ থেকেই আমাদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে হবে।’ একই সুরে উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান ডিজে ওয়াটলিং বলে দিলেন, ‘আশা করি পরের ম্যাচেই আমরা সিরিজে ফিরে আসব।’
আশাবাদী নিউজিল্যান্ডের কোচ মার্ক গ্রেটব্যাচও। কিন্তু সাবেক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে এখনো আসলে প্রথম ম্যাচে হারের কারণ খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে, ‘আমরা আসলে ভালো খেলিনি। বৃষ্টির সামান্য সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ তাদের পরিকল্পনাগুলো খুব ভালো কাজে লাগিয়েছে। আমাদের খেলায় খুব জড়তা ছিল। ব্যাটিংয়ে কিছু সময় আমরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু দ্রুত দুটো উইকেট হারানোটা ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে আমাদের জন্য বিরাট ধাক্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত ওরা দুর্দান্ত খেলেছে, আমাদের চাপে ফেলে দিয়েছে।’
নিউজিল্যান্ডের হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে গ্রেটব্যাচ আরেকটি ব্যাপার খুঁজে পেয়েছেন—সাকিব আল হাসান। বৃষ্টি, নিজেদের ভুল তো আছেই; এর সঙ্গে হারের জন্য বড় ‘দায়’ দিচ্ছেন তিনি বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে, ‘সাকিব অসাধারণ খেলেছে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত একটা ম্যাচ খেলেছে। সেই সঙ্গে সমর্থনও পেয়েছে।’
প্রথম ম্যাচের পরাজয়ে আরেকটি ক্ষতিও হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই ধাপ উন্নতি করে ৪ নম্বরে উঠে যেত তারা। অবশ্য এ নিয়ে কোনো আফসোস নেই বলেই দাবি গ্রেটব্যাচের, ‘আমরা আসলে এ নিয়ে ভাবছি না। আমরা একেকটা ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। র‌্যাঙ্কিং তো থাকবেই। কিন্তু সত্যি কথা বলি, আমরা সিরিজ নিয়ে ভাবছি, প্রতিটা ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। আসলে আমার মনে হয়, এসব জিনিস (র‌্যাঙ্কিং) নিয়ে ভাবতে শুরু করলে ভুল পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
কে জানে, সিরিজের আগে হয়তো ভেবেছেন; প্রথম ম্যাচ হেরে ব্যাপারটা হাতছাড়া হওয়ার পর আর ভাবেন না! সে যাই হোক, গ্রেটব্যাচ এখন শুক্রবারের অপেক্ষায়। আশায় আছেন, শিষ্যরা এই ম্যাচেই রুখে দাঁড়াবে, ‘সিরিজে সমতা ফেরাতে শুক্রবারের এই ম্যাচটা জিততে হবে আমাদের। জেতা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ১-০তে পিছিয়ে আছি। আশা করি, শুক্রবার আমরা কঠিন প্রতিপক্ষে পরিণত হব। আমরা ভালো করেই জানি, এই ম্যাচেই তারা ২-০ করে ফেলতে পারে।’
গ্রেটব্যাচের এই জানাটা সত্যি হয়ে গেলে কেমন হয়!

No comments

Powered by Blogger.