পাকিস্তানে দুই কোটি লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত: গিলানি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেছেন, ‘দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় দুই কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ এরই মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় কলেরা-আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বন্যার কারণে দেশটিতে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। রোগ-ব্যাধির কারণে দ্বিতীয় দফায় অনেক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো।
বন্যার কারণে গতকাল শনিবার স্বাধীনতা দিবসের অধিকাংশ সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীতানুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করে দেওয়া হয়েছে সামরিক কুচকাওয়াজও। দিনটি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গিলানি বলেন, ‘বন্যায় প্রায় দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি ডলার দামের খেতের উঠতি ফসল ও খাদ্যের মজুদ। বন্যায় জাতীয় অর্থনীতির বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী গিলানি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় গোটা জাতিকে সাহস দেখাতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, জাতি আবারও এই সংকট থেকে বিজয়ীর বেশে মাথা তুলে দাঁড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মারাত্মক হুমকি, যা ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বদলে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবেন। এই বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বন্যাদুর্গত মানুষের সাহস ও বীরত্বকে আমি অভিবাদন জানাই। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, তাঁদের দুর্দশা কমাতে সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করবে।’
বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪৬ কোটি ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় এই অর্থ অপ্রতুল। এরই মধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় কলেরা-আক্রান্ত এক রোগীকে শনাক্ত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিঙ্গোরায় কমপক্ষে একজন কলেরা-আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় কমপক্ষে ৩৬ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, এই দুর্যোগে এক হাজার ৬০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এক হাজার ৩৪৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অবকাঠামো ও অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি পাকিস্তানকে পিছিয়ে দিতে পারে।
বন্যায় ফসলের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, কৃষি ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা এখন কঠিন। আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ক্রপস প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, শুধু তুলা চাষে ক্ষতি হয়েছে ১৮০ কোটি ডলারের। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ১৭ মিলিয়ন কৃষি জমি এখন পানির নিচে।

No comments

Powered by Blogger.