লড়াই হবে সমানে সমান

জার্মানি আর ইংল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডেই মুখোমুখি হচ্ছে দেখে অনেকেই হতাশ। এই দুই সেরা দলের একটিকে যে আজই বিদায় নিতে হবে। তবে আমি ইতিবাচক দিকই দেখছি। এটি বিশ্বকাপের উত্তেজনায় বাড়তি রং চড়াচ্ছে।
ইংল্যান্ড এবারের আসরের অন্যতম ফেবারিট। গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে ওদের খেলা যদিও মন ভরায়নি, তৃতীয় ম্যাচে ওরা ওদের সম্ভাবনার আভাসটুকু ঠিকই দিয়েছে। জার্মানিও শক্তিশালী দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আমরা তো দেখিয়েই দিয়েছি, যেকোনো দলকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। ইংল্যান্ড নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুটো পয়েন্ট হারাবে আশা করেনি। আর জার্মানিও নিশ্চয়ই ভাবেনি, ওরা হেরে যাবে সার্বিয়ার বিপক্ষে। এটাই তো ফুটবল! এ কারণেই আমার মনে হয়, আজকের ম্যাচে লড়াই হবে সমানে সমান।
রক্ষণে দুটো দলই শক্তিশালী। রক্ষণভাগে ইংল্যান্ডের নেতা জন টেরির মতো অভিজ্ঞ একজন। একইভাবে জার্মানির আছে ফিলিপ লাম; ও তো অধিনায়কই। ইংল্যান্ডের মাঝমাঠে আছে ব্যারি, জেরার্ড আর ল্যাম্পার্ডের মতো খেলোয়াড়। প্রতিপক্ষের রক্ষণের জন্য যারা হুমকি।
শোয়েনস্টাইগার, বোয়েটাং আর ওজিলের ফিটনেস নিয়ে জার্মানি শিবিরে একটু দুশ্চিন্তা আছে। বয়সে তরুণ হলেও ওজিল তার সৃষ্টিশীলতা আর প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভার কারণে এরই মধ্যে দলের ভরসা হয়ে উঠেছে। আক্রমণভাগে ক্লোসা-পোডলস্কির ক্ষমতা আছে ইংল্যান্ডের রক্ষণজট খুলে ফেলার। তবে ইংলিশদেরও আক্রমণভাগে আছে ওয়েইন রুনি। আজও তারা সেরা খেলাটাই খেলবে বলে আমার ধারণা। দুই দলের কৌশলই আঁচ করে নিতে পারছি। জার্মানি বলের দখল বেশি রাখবে। আর ইংল্যান্ড বল চালাচালি করবে অনেক দ্রুত। গোলের সুযোগ অবশ্য তৈরি হবে তুলনামূলক কম।
ইংল্যান্ড ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকলে ম্যাচটা টাইব্রেকে গড়ানোর আগেই জেতার চেষ্টা করবে। ইতিহাস বলছে, জার্মানি-ইংল্যান্ড ম্যাচ প্রায়ই ড্রতে শেষ হয়। এরপর ফল নির্ধারণ করতে পেনাল্টি শ্যুট-আউট শুরু হলে জার্মানিই জেতে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আমরা এটি দেখেছি, ১৯৯৬ ইউরোতেও দেখেছি। এবং খুব সম্ভবত ২০১০ বিশ্বকাপেও দেখব!
ইংল্যান্ড-জার্মানি ম্যাচের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন, আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো তুলনামূলক সহজ। অবশ্য দুটো দলের রক্ষণ এমন, ফলাফল যে কাউকে চমকেও দিতে পারে। মেক্সিকো খুবই সাবলীল, বল পাসিং ওদের খুবই ভালো। সুযোগ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে খুব একটা সফল নয়। ফ্রান্সের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটিতে চোট পেয়েছিল ওদের স্ট্রাইকার কার্লোস ভেলা। আজ ওর ফেরার কথা। এতে মেক্সিকো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। মেক্সিকো দলটায় নেতা আছে তিনজন। রক্ষণের নেতা মার্কেজের কাঁধে আজ বাড়তি দায়িত্ব ভালো করার।
বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনাকে খোঁড়াতে দেখে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ওরাই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পতাকা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে অগ্রবর্তী অশ্বারোহী যোদ্ধার মতো। লিওনেল মেসির মতো ক্ষণজন্মা এক প্রতিভা আছে ওদের। ও দলে থাকলে শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত আর্জেন্টিনা হারবে না। হিগুয়েইনের মধ্যে ওরা আরেকটি বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ড পেয়ে গেছে। এর সঙ্গে তেভেজ-আগুয়েরোদের যোগ করুন। মাথায় রাখুন ওদের বেঞ্চে বসে থাকা ফরোয়ার্ডদেরও, যাদের বিশ্বের যেকোনো দল সানন্দে বরণ করে নিত।
আমার মাথায় সবচেয়ে মজার যে তথ্যটি ঘুরছে, এত এত তারকা ফরোয়ার্ড থাকার পরও কিন্তু নাইজেরিয়ার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিল একজন ডিফেন্ডার—গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ। গ্রিসের বিপক্ষেও প্রথম গোলটি এসেছিল আরেক ডিফেন্ডার ডেমিকেলিসের পায়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ওদের প্রথম গোলটি আবার আত্মঘাতী।
আর্জেন্টিনা আজ শুরু থেকেই আক্রমণ চালাবে। একই সঙ্গে মেক্সিকোও কিন্তু খেলার জন্য যথেষ্ট জায়গা পাবে। মেক্সিকো যদি হুট করে প্রথম গোলটি করে বসে, আর্জেন্টিনা কীভাবে সামাল দেয়, সেটি দেখার জন্য বসে রইলাম। ম্যাচটায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে আর্জেন্টিনা হারবে, সেটি কল্পনা করাও এখন কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.