মেঘনা নদী দখল -অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের কাছে মেঘনা নদী দখল করে ভরাট করার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, ওই এলাকার অর্ধেক নদী ভরাট হয়ে গেছে। এভাবে কেউ নদী দখল করতে পারে, ভাবাই যায় না।’ সাধারণ কোনো মানুষ নয়, এহেন বিস্ময় যিনি প্রকাশ করেছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি প্রশাসনের প্রধান পদাধিকারী ব্যক্তি। তাঁর মন্তব্য শুনে মনে হয়, এ বিষয়ে তাঁর কিছুই করার নেই। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ নদী—যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের, এবং আইনগতভাবে যা ভরাট করার অধিকার খোদ সরকারেরও নেই—সেই নদী ভরাট ও জবরদখল ওখানে চলছে নির্বিঘ্নে। প্রশাসন কার্যত অকার্যকর।
মেঘনা নদীর প্রায় ৪০০ ফুট ভরাট করে ফেলা হয়েছে, সেখানে একটি প্লাস্টিক কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ চলছে। প্রথমত, নদী ভরাট করা বেআইনি। দ্বিতীয়ত, নদীর তীরে প্লাস্টিক কারখানার মতো রাসায়নিক স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমন উদ্যোগ নেওয়ার আগে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। তৃতীয়ত, উল্লিখিত স্থানের কাছাকাছি আশুগঞ্জ সার কারখানার উৎপাদন চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে সার কারখানার কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবং সর্বোপরি, সেখানে প্লাস্টিক কারখানা নির্মাণ বন্ধ রাখার অনুরোধ একাধিকবার জানিয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সার কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু ফল হয়নি। নদীবক্ষে মাটি ফেলে ভরাটের কাজ নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলেছে। কী করে এটা সম্ভব হচ্ছে? যাঁরা এই অবৈধ কাজ করছেন, তাঁদের কাছে দেশের আইন, প্রশাসনের নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর অনুরোধ—কোনো কিছুরই কি মূল্য নেই? সবকিছুই তাঁরা এভাবে অগ্রাহ্য করতে পারছেন কিসের জোরে?
বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, মেঘনা নদী ভরাট করে প্লাস্টিক কারখানা নির্মাণের কাজটি যাঁরা করছেন, তাঁরা সরকারি দল আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ও একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির আত্মীয়। মূলত এ কারণেই কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো অনুরোধে তাঁরা ভ্রুক্ষেপ করছেন না। সাংসদ বলেছেন, নদীর ওই জায়গা কারখানা নির্মাণের জন্য কেনা হয়েছে, দখল করা হচ্ছে না। এ বক্তব্য কি ঠিক? নদীবক্ষের প্রায় ৪০০ ফুট ভরাট হয়ে গেছে, এখনো নদী ভরাটের কাজ চলছে, আর সাংসদ বলছেন এ জমি কেনা হয়েছে—এটা কি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কথা হলো?
স্থানীয় প্রশাসনের যদি কিছুই করার ক্ষমতা না থাকে, ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের প্রভাবে সেখানে যদি প্রশাসন, আইন—সবকিছু অকার্যকর হয়ে যায়, তাহলে তো সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে ওঠে। আশুগঞ্জের কাছে মেঘনা নদীর ওই জবরদখল বন্ধ করতে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.