এসএ গেমসের হিসাব কোথায়

দক্ষিণ এশীয় গেমস আয়োজনে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। এর ফলে গেমসের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়ে ‘হরির লুট’ হয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে জনমনে।
গত ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে একাদশ দক্ষিণ এশীয় (এসএ) গেমস শেষ হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি। পরপরই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) সংশ্লিষ্ট উপকমিটিগুলোকে চিঠি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে খরচের হিসাব চায়। ৫০ দিন পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব পায়নি বিওএ।
জানা গেছে, ২০টি উপকমিটির মধ্যে মাত্র তিনটি কমিটি তাদের হিসাব দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে—উত্সব (সেরিমনিজ) কমিটি, খাদ্য ও বাসস্থান কমিটি এবং ভেন্যু ব্যবস্থাপনা কমিটি। স্টিয়ারিং, সমন্বয়, বাজেট এবং বিপণন কমিটির খরচ তত্ত্বাবধান করেছে বিওএ অফিস। বাকি কমিটিগুলোর হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও সেই কাজটি তাদের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না।
উত্সব কমিটির দেওয়া হিসাব: ব্যান্ডদল লক্ষ্মীটেরা, অফিস এবং বিবিধ খরচ হয়েছে ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এই খাতে এখনো বকেয়া আছে ৩০ লাখ টাকা। এর মানে এই খাতে মোট খরচ ৭১ লাখ টাকা। আলোচিত অ্যাকুয়াটিক শো বাবদ খরচ হয়েছে ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বকেয়া আছে এক কোটি ৩০ লাখ। গ্যালারি ও মাঠ ডিসপ্লের জন্য খরচ ১০ কোটি ২৯ লাখ (বকেয়া ৩৬ লাখ), স্টেডিয়াম সংস্কার বাবদ খরচ তিন কোটি ৫২ লাখ (বকেয়া ৫৯ লাখ), আর্টস গ্রাফিকস, সংগীতায়োজন এবং নাচোলের রানী কাহিনির জন্য এক কোটি ৯৮ লাখ (বকেয়া ২২ লাখ) এবং স্টেডিয়াম সজ্জা ছয় লাখ, এলসিডি পর্দা দুই কোটি সাত লাখ (এখনো বকেয়া ২৫ লাখ), ক্যাম্পিং ও পরিবহন এক কোটি ২৯ লাখ, লজিস্টিক ৩১ লাখ টাকা।
মোট ৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা খরচের হিসাব দেখিয়েছে উত্সব কমিটি। পেয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভেন্যু ব্যবস্থাপনা কমিটি খরচ দেখিয়েছে ২২ লাখ ১২ হাজার, পেয়েছে ২০ লাখ টাকা। খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটি খরচ দেখিয়েছে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ, যার মধ্যে হোটেল বিলই ১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কমিটির সদস্যসচিব কাজী রাজীবউদ্দিন আহমেদ অবশ্য জানিয়েছেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধান করেছি মাত্র। টাকাটা খরচ করেছে বিওএ।’
বিওএর দেওয়া তথ্য—১৬টি উপকমিটিকে ৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বিনোদন উপকমিটি ৯৫ লাখ, টিকিট প্রিন্টিং ও গেট ম্যানেজমেন্ট ১৫ লাখ, পরিসংখ্যান-তথ্য কমিটি সাড়ে ছয় লাখ, টেকনিক্যাল উপকমিটি ২২ লাখ, মিডিয়া উপকমিটি ৪৭ লাখ (বিজ্ঞাপন বাবদ ২৯ লাখ), স্বেচ্ছাসেবক এক কোটি, মেডিকেল ৬০ লাখ ৬৮ হাজার, অভ্যর্থনা প্রটোকল-লিয়াজোঁ ৮৫ লাখ, নিরাপত্তা ২৫ লাখ, পরিবহন-ভ্রমণ-নিয়ন্ত্রণে ৩২ লাখ, স্মারক-মার্চেন্ডাইজিং-পুস্তিকা প্রকাশনায় এক লাখ, আমন্ত্রণ উপকমিটি ১৩ লাখ টাকা। ২৩টি ফেডারেশনকে দেওয়া হয়েছে চার কোটি ৩৭ লাখ টাকারও বেশি।
অনেক উপকমিটি এখনো তাদের সব খরচ পরিশোধ করেনি বলে জানা গেছে। অনেকে অবশ্য বলেছেন, বাজেটের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। অনেকের দাবি, খরচ বেশি হয়েছে। অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব ফজলুর রহমান বাবুল যেমন কাল রাতে বললেন, ‘ট্রান্সপোর্টের কিছু খরচ এসে পড়ায় বিওএর দেওয়া টাকার চেয়ে খরচ আরও বেশি হয়েছে আমাদের।’
প্রশ্ন হচ্ছে, টাকা খরচের হিসাব কোথায়? কয়েকটি উপকমিটির কর্মকর্তারা বলছেন, হিসাব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় সবগুলো কমিটির প্রধান পদে ছিলেন সরকারি দলের সাংসদেরা, খুব ব্যস্ত বলে তাদের অনেকে সময় করে উঠতে পারছেন না। অন্য দায়িত্বশীলদেরও পাওয়া যাচ্ছে না সময়মতো। পাশাপাশি ‘দেব আর কি’ মানসিকতাও পেয়ে বসেছে অনেককে!
১৭২ কোটি টাকার গেমসে আয়োজন বাবদ ৪৯ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। পৃষ্ঠপোষকেরা দিয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। টাকা খরচের স্বচ্ছতা কতটা? বিওএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, ‘সেরিমনিজ (উত্সব) কমিটির দেওয়া হিসাব অডিট করতে দেওয়া হয়েছে। অডিটের আগে কিছু বলা যাবে না।’
বিওএর সহসভাপতি ও বাংলাদেশ দলের শেফ ডি মিশন মিজানুর রহমান মানু বলেছেন, ‘দ্রুতই হিসাব দেওয়া উচিত কমিটিগুলোর। কোথায় কী খরচ হলো, সবার জানার অধিকার আছে। আশা করি, শিগগির সংবাদ সম্মেলন করে খরচের হিসাব দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.