বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা

ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে যে আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক, সেটা একরকম স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার বলেই আমাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত। শিবির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘রগকাটা’, হত্যা, গুমসহ নানা অপরাধমূলক তত্পরতায় জড়িত একটি সংগঠন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবেও শিবির ছাত্রলীগের আদর্শগত শত্রু। এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হলে ছাত্রলীগ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে শিবিরের চিহ্নিত কর্মীদের বসানো হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারাও মনে করেন যে তাঁদের সংগঠনে শিবির ঢুকে পড়েছে। এ সম্পর্কে বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিস্তৃত তথ্য রয়েছে।
এ যে বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা! ঘোগ হলো বুনো কুকুর, যা বাঘের চরম শত্রু। সতর্ক থাকলে বাঘের ঘরে তার বাসা বাঁধার কথা নয়। কারণ, এটা তো বাঘের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। তাহলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের মধ্যে শিবির এসে ঢুকল কীভাবে? কারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা? এ বিষয়টি ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বকে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন যে মাত্র কয়েক দিন আগে তাঁরা এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন। যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হলে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করলে হয়তো এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সম্প্রতি বহিষ্কৃত সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুককে অনেক আগেই সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া যেত। তাহলে হয়তো সেদিন ওই হলে রক্তাক্ত সংঘর্ষের সুযোগ থাকত না এবং মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে প্রাণ দিতে হতো না।
সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে একধরনের অপরাধী ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মিশে যায়। এটা সবাই জানে। আবার এটাও সত্য যে দলছুটদের দলে টানার একটা প্রবণতাও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে থাকে। এখানে আদর্শের কোনো ব্যাপার নেই। সুবিধাবাদী ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ই মূল উদ্দেশ্য। ছাত্রলীগের মধ্যে এই শেষোক্ত প্রবণতা থাকা বিচিত্র নয়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হল দখল, সিট দখলের জন্য ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের দলে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ কম নয়। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে শিবিরের সন্ত্রাসীদের দলে টানা হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ এফ রহমান হলের বহিষ্কৃত সভাপতি ফারুকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার বললেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার একজন নেতা জানিয়েছেন। অর্থাত্ ছাত্রলীগের নেতারা জেনেশুনেই দলের মধ্যে শিবির প্রতিপালন করছেন। এটা শুধু ছাত্রলীগের নয়, সরকার ও দেশের জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনবে। তার লক্ষণগুলো ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এখন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী শিবিরের কিছু নেতা-কর্মীকে চিহ্নিত করে বের করে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ভর্তি-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সব আর্থিক লুটপাট ও অপকীর্তি বন্ধ হলেই সংগঠন থেকে শিবির তো বটেই, সব ধরনের সন্ত্রাসীই দূর হবে।
শিবিরের ব্যাপারে ছাত্রলীগ যদি বাঘের ভূমিকা অক্ষুণ্ন রাখতে চায়, তাহলে তার চেহারাটা নিষ্কলুষ করার ওপর সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে ঘোগেরা বাসা বাঁধবেই।

No comments

Powered by Blogger.