এমিলিকে পুরস্কার উত্সর্গ বুকোলার

পরশু রাতে স্থানীয় একটা হোটেলে চলছিল মোহামেডানের ডিনার পার্টি। ফেডারেশন কাপের শিরোপা ধরে রাখার আনন্দটা তাত্ক্ষণিকভাবে ওভাবেই পালন করেছে সাদা-কালোরা। ওই অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া আর হইহুল্লোড়ের মধ্যে সবাইকে থামিয়ে হঠাত্ ঘোষণা দিলেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার বুকোলা—টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফিটা তিনি একজনকে উত্সর্গ করবেন। কাকে?
তাঁরই সতীর্থ স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলিকে।
কাল এমিলিই খুলে বললেন পুরো ঘটনাটা, “টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম, সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার জন্য একে অন্যকে সহযোগিতা করব। মাঠে এমন যাতে না হয়, একজন অন্যজনকে বল দেব না। কাল ডিনার পার্টিতে সেই কথাটাই বলল বুকোলা। আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছে, ‘এমিলি তোমাকে পুরস্কারটা উত্সর্গ করলাম আমি।’’
এবার ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচে ১৯ গোল করেছে মোহামেডান। ১২টিই বুকোলা-এমিলি জুটির। সমান ৬টি করে। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে ২৪ গোল, যার ১৫টিই এই জুটির। গত বি-লিগে ১৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা বুকোলা এই ফেডারেশন কাপেও ৮ গোল করে পেলেন সেই স্বীকৃতি। কাকতালীয়ভাবে, গত ফেডারেশন কাপেও ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন বুকোলা। এবার এমিলির গোল ৭টি।
এমিলিকে এবার পাশে পেয়ে খুবই খুশি বুকোলা, ‘ও দারুণ স্ট্রাইকার। আমার সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। আমি ফেডারেশন কাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছি এমিলির মতো খেলোয়াড়ের সঙ্গে জুটি গড়তে পেরে। এ জন্যই ভাবলাম, ওকেই পুরস্কারটা উত্সর্গ করে সম্মান জানাই। নিজেও সম্মানিত বোধ করছি।’
বুকোলা-এমিলি জুটির কাছ থেকে আসন্ন বাংলাদেশ লিগে আরও গোল চাইবে মোহামেডান। তবে আপাতত ফেডারেশন কাপ জয়ের আনন্দটাই উপভোগ করছে দলটি। কাল দিনের বেলা ছুটি দেওয়া হলেও রাতে আবার ডিনার হওয়ার কথা ছিল। রাত ৯টা নাগাদ খেলোয়াড়দের ক্লাবে চলে আসার জন্য বলে দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়রদের জন্য বোনাস ঘোষণা দেওয়ার কথা শোনা গেছে বিকেলে ক্লাবে গিয়ে। তবে কাল অনুষ্ঠানটি হয়নি, আজ হবে।
ঠিক উত্সব বলতে যা বোঝায়, তার কিছু ছিল না কাল মোহামেডান ক্লাবে। সাংবাদিক এসেছে দেখে কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এক কর্মীকে ডেকে মিষ্টি আনতে বললেন। মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ি ভালোই হচ্ছে। ক্লাবে কেউ এলে তাঁকে মিষ্টিমুখ না করিয়ে ছাড়া হচ্ছে না। এরই ফাঁকে ‘মোহামেডানের হুজুর’ নামে পরিচিত আওলাদ হোসেনকে পাওয়া গেল ক্লাবের ভেতরে এক রুমে। এক সাংবাদিক তখন তাঁকে রসিকতা করে বললেন, ‘খুব আনন্দে আছেন মনে হচ্ছে। আপনার ছবিও দেখলাম ছাপা হয়েছে কাগজে।’ হুজুরের উত্তরে ছিল খানিক হতাশাই, ‘কই, আমার ছবি। কাইটা দিছে...।’
আবাহনী ক্লাবে ছিল শোকের আবহ। স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই ক্লাবে ছিলেন না। চার ঘানাইয়ান ইব্রাহিম, সামাদ, শেরিফ, আওয়ালরা নিজেদের রুমে টিভিতে সিনেমা দেখছিলেন। কেউ ইংরেজি ছবি, কেউ আবার হিন্দি ছবি দেখায় মগ্ন! ‘ভালো খেলেও টাইব্রেকারে হেরেছি আমরা। এটা নিছক দুর্ঘটনা’—এই বলে সিনেমা দেখায় মন দিলেন ইব্রাহিম।
সেখানে তাঁর মন বসছে বলে অবশ্য মনে হলো না!

No comments

Powered by Blogger.