মোহামেডানের হয়ে গেলেন তামিম


এখন পর্যন্ত এগিয়ে থাকল মোহামেডানই। লিগ শুরুর আগেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর চেয়ে মোহামেডানকে এগিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। মোহামেডানের লোভনীয় প্রস্তাবে আবাহনী ছেড়ে জাতীয় দলের এই বাঁহাতি ওপেনার কাল দেড় শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে হয়ে গেলেন মোহামেডানের। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলসহ মোট ১৪ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে এ রকম চুক্তি হয়েছে বলে দাবি মোহামেডান কর্মকর্তাদের।
আবাহনীর পর ক্রিকেটারদের সঙ্গে মোহামেডানের এ ধরনের চুক্তি দলবদলের ধারণাই পাল্টে দিল এবার। আগে দলবদলের তিন দিন ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন দলে নাম লেখাতেন ক্রিকেটাররা। আর এবার দলবদলের এক মাস আগেই ঢাকার ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি লিখিত চুক্তি করল ক্রিকেটারদের সঙ্গে। প্রথমে মাশরাফি ও সাকিবের সঙ্গে চুক্তি হলো আবাহনীর। কাল মোহামেডানও গেল সে পথে। এ প্রসঙ্গে মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির প্রধান লুত্ফর রহমানের বক্তব্য পরিষ্কার, ‘আমাদের প্রতিপক্ষরাই (আবাহনী) এই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা মাশরাফি-সাকিবের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমরা সেটার কাউন্টার দিলাম।’
তিনি ‘কাউন্টার’ দিয়েছেন আবাহনী কর্মকর্তারা তামিমের যে সমালোচনা করেছেন সেটারও, ‘আমার সঙ্গে তামিমের অনেক আগে থেকেই কথাবার্তা চলছিল। পত্রিকায় ওর সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে, যেটা খুবই দুঃখজনক। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মৌখিকভাবে অনেক রকম কথাই হতে পারে। কিন্তু তার তো কারও সঙ্গে লিখিত চুক্তি হয়নি।’
তামিমও আরও একবার ব্যাখ্যা করেছেন প্রতিশ্রুতি দিয়েও আবাহনীতে না যাওয়ার কারণ, ‘এ জিনিসটা আমি গত বছর মোহামেডানের সঙ্গেও করেছিলাম। মোহামেডানের সঙ্গে কথা বলার পর একটা ভালো প্রস্তাব আসে। আমি এটা তাদের জানিয়ে সেবার অন্য দলে খেলি। একই ব্যাপার এবারও হয়েছে। মোহামেডানের প্রস্তাব পাওয়ার পর আমি আবাহনীকে জানাই, আমার ১৮ লাখ টাকার একটা প্রস্তাব আছে। এর পর আবাহনীর কাছ থেকে যে উত্তর পেয়েছি, সেটা না বলাই ভালো। ওখানে খেলার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায় এর পরই। পরে মোহামেডানকে আমি আমার দাবি জানাই। ওনারা আমাকে ২০ লাখ টাকায় নিতে রাজি হয়েছে।’ আবাহনী ছেড়ে আসাটাকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গও বলতে রাজি নন তামিম, ‘যতক্ষণ আমি সাইন করব না, টাকা নেব না, ততক্ষণ তো আসলে কোনোটাই প্রতিশ্রুতি না। আমি যখন একটা বড় প্রস্তাব পাব আমার তো এক শ ভাগ অধিকার আছে সেটা নিয়ে কথা বলার। মুখে কথা দেওয়ার পর আমার আর কোনো অধিকার থাকবে না, এটা তো ঠিক না।’ তামিম বলেছেন, তার মোহামেডানে যাওয়ার আরেকটা কারণ, এ বছর বড় ভাই নাফিস ইকবালেরও একই দলে খেলা, ‘যখন ভাইয়ের সঙ্গে একই দলে খেলার প্রস্তাব পেলাম, আমার জন্য সবচেয়ে বড় জিনিস ছিল এটাই। এর আগে বিমানে দুজন একসঙ্গে খেললেও একসঙ্গে ওপেন করিনি। এবারই প্রথম হবে সেটা।’
তামিম, আশরাফুল, নাফিস ছাড়াও আর যাঁদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে মোহামেডান; তাঁদের মধ্যে আছেন খালেদ মাসুদ, আফতাব আহমেদ, শামসুর রহমান, মাহমুদউল্লাহ, ফয়সাল হোসেন ও নাবিল সামাদ। বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে এবার শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ফারভিজ মাহারুফকে শুরু থেকেই খেলানোর ইচ্ছা মোহামেডানের।
তামিমের আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আশরাফুলের মোহামেডানে খেলা। কাল সেই আশরাফুলকেও আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের বলে ঘোষণা করল মোহামেডান। আশরাফুলও এতে খুব খুশি, ‘ছোটবেলা থেকে আমি মোহামেডানের সমর্থক। আগে এক বছর মোহামেডানে খেললেও এবারের দলটা অনেক ব্যালান্সড। আমি মনে করি, কাগজে-কলমে মোহামেডানই এক নম্বর দল। আশা করব, এবার আমরা টি-টোয়েন্টি এবং লিগ দুটিরই শিরোপা জিতব।’
আশরাফুলকে মোহামেডান ঠিক কত টাকা দিচ্ছে, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। আশরাফুল এবং মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির প্রধান কেউই অবশ্য পারিশ্রমিকটাকে ‘টাকা’ বলছেন না, বলছেন ‘আর্থিক সুবিধা’ এবং সেটা নাকি প্রায় ২৫ লাখ টাকার। সে হিসাবে আশরাফুলই কি তাহলে এবার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটার?

No comments

Powered by Blogger.