বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্প বাতিল হচ্ছে by কাজী সোহাগ

বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই প্রকল্প নিয়ে কোনো ধরনের কাজ করতে চান না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্টো রাশিয়ার সঙ্গে যে ধরনের চুক্তি হতে যাচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশেষ করে স্যাটেলাইট প্রকল্পের জন্য যে সফটলোনের প্রস্তাব বাংলাদেশ করেছে তার বিপরীতে উচ্চ ইন্টারেস্ট দাবি করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ওই প্রকল্পের কাজের মধ্যে বেশকিছু অসঙ্গতি পেয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) এক কর্মকর্তা বলেন, স্যাটেলাইট প্রকল্পের কাজ দীর্ঘমেয়াদি। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাই আগামী সরকারের জন্য হয়তো প্রকল্পটি রাখা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত এখনও বাতিল হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিএসসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বর্তমান সরকার বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছে তা আমরা এখনো জানি না। এই সময় কাজ শুরু হবে কি না কিংবা পরবর্তীতে যারা আসবেন তারা শুরু করবেন কিনা বিষয়গুলো সেটা। তবে এটা বাতিল হবে না। আপাতত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ভাববার বিষয় রাশিয়ার সঙ্গে যাবো নাকি ফ্রান্সের সঙ্গে যাবো? এর মধ্যে আবার আর্থিক ইস্যুও রয়েছে। আমরা যদি সফ্‌ট লোন পাই তাহলে কার কাছ থেকে পাবো সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আগের সরকারের আমলে বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে অনেকদূর এগিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া যে লোন অফার করেছিল সেটার ইন্টারেস্ট রেট অনেক হাই ছিল। ৫ ভাগেরও বেশি। কিন্তু সফ্‌ট লোন হয় সাধারণত এক থেকে দেড় পার্সেন্টের মধ্যে।

এক প্রশ্নে স্যাটেলাইটটি বঙ্গবন্ধুর নামে হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য রুশ ফেডারেশনের গ্লাভকসমসের সঙ্গে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয় ২০২২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি। মহাকাশ বিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমসের সঙ্গে স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ বিষয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ?্য দিয়ে আর্থ অবজারভেটরি ক্যাটাগরির ওই স্যাটেলাইটটির নির্মাণের অভিযাত্রা শুরু হয়। ওইসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর উপস্থিতিতে ঢাকায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এর প্রধান কার্যালয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তৎকালীন বিএসসিএল’র চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহজাহান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওই সময়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভিকেনতেভিচ মান্তিতস্কি এবং অনলাইনে রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান ও গ্লাভকসমস-এর মহাপরিচালক দিমিত্রি লস্কুতব উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ রাশিয়া সরকারের সহযোগিতায় নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১২ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা তৃতীয় সাবমেরিন ক?্যাবল সংযোগ স্থাপনে ইতিমধ্যে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর করেছি যা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের তৃতীয় অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ করা। এই সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তার অভিযাত্রা আলোর মুখ দেখে। প্রসঙ্গত পর্যবেক্ষণমূলক স্যাটেলাইট ছিল বঙ্গবন্ধু-২। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল  ৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ওই প্রকল্পের কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিলম্ব হয়। এটি ২০২৩ সালে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের অভিযানের সময়কাল নির্ধারণ করা ছিল ১৮ বছরের মতো। এটি হতো একটি পৃথিবী অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। এটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করতো। ফলে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট প্রয়োজন ছিল না।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয় ২০১৮ সালে। টিভি চ্যানেলগুলোর সেবা নিশ্চিত করাই এ স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ। এর সাহায্যে চালু করা হয় ডিশ টিভি’র ডিরেক্ট টু হোম সার্ভিস-ডিটিএইচ। এছাড়াও যেসব জায়গায় অপটিক ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল পৌঁছায় না সেসব জায়গায় এই স্যাটেলাইটের সাহায্যে দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগ। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার আর বাকিটা বিদেশি অর্থায়ন।

No comments

Powered by Blogger.