ইসরাইলি অবরোধের কারণে অনাহারের কবলে উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা

উত্তর গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক অবরোধ ও বোমাবর্ষণের ২৩তম দিনে মানুষের জীবনযাত্রার লড়াই অব্যাহত।অক্সফামের একজন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন যে, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় অনাহারকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে এবং ইসরাইলের চলমান বোমা হামলার কারণে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও উত্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।

মাহমুদ আলসাক্কা, যিনি অক্সফামের খাদ্য নিরাপত্তা এবং গাজায় জীবিকা নির্বাহের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন যে কিছু ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ক্ষুধায় ‘অনাহারে মরছে’ এবং আগামী দিনে আরও বেশি লোক মারা যাবে। তিনি বলেন, ‘এলাকার বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিরা সহায়তা সরবরাহের উপর নির্ভর করে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তারা কোনও সরবরাহ পাচ্ছে না।’ ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯৬ শতাংশই উচ্চ মাত্রার খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। ইউনিসেফের মতে, ১০টির মধ্যে নয়টি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে। যুদ্ধের এক বছরে অন্তত ৩৭টি শিশু অপুষ্টি বা পানির অভাবে  মারা গেছে। জাতিসংঘ বলেছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল উত্তর গাজায় খাদ্য সহায়তার ৮৩ শতাংশ প্রবেশে বাধা দিয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫০,০০০ শিশুর অপুষ্টির জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। রবিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি এক্স-এ বলেছেন, উত্তর গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ ও বঞ্চনা সেখানকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের তোয়াক্কা না করে এই সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। অক্সফাম সতর্কবার্তাটি এসেছে যখন ইসরাইলি বাহিনী রবিবার উত্তর গাজার  আশেপাশে বোমাবর্ষণ করেছে এবং মানবিক কর্মকর্তারা ইসরাইলি বাহিনীর চলমান স্থল হামলার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে, সেখানে জোরপূর্বক কয়েক হাজার বাসিন্দাকে এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। শনিবার বিত লাহিয়ায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর স্ট্রিপের  উত্তরে পাঁচটি ভবনকে  লক্ষ্যবস্তু করার পর অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। বেত লাহিয়ায় পৃথক হামলায় আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া, বেইট হানুন এবং বেইট লাহিয়া শহরে ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার হানি মাহমুদ, মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে রিপোর্ট করছেন, অন্তত ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন অথবা ধ্বংসস্তূপের নীচে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি রবিবার সকালে জাবালিয়ায় একটি বাসায়  ইসরাইলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত এবং অন্যান্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন  ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা। ইসরাইলি সৈন্যরা মানুষকে উচ্ছেদ কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধ্য করেছে  এবং আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছেন যে, গাজার সমগ্র জনসংখ্যা মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেড ক্রস বলেছে যে, ইসরাইলিদের গাজার মানুষকে সরে যেতে বলার আদেশ এবং উত্তরে প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা বেসামরিক জনগণকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলেছে। অনেক বেসামরিক লোক বর্তমানে চলাফেরা করতে অক্ষম। যুদ্ধের কারণে তারা  আটকা পড়েছে এবং এখন প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও সেখানে উপলব্ধ নয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, যে অবরোধ উত্তর গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে এবং বোমা বিধ্বস্ত স্থানে চিকিৎসক দল পৌঁছাতে পারছে না। ইসরাইল বলেছে যে, তাদের বাহিনী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তর গাজায় যুদ্ধ করছে। তারা হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় জাবালিয়া এলাকায় ৪০ জনেরও  বেশি হামাস যোদ্ধাদের হত্যা করেছে। পাশাপাশি তাদের অবকাঠামো ভেঙে দিয়েছে এবং বড় পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম খুঁজে পেয়েছে। গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মনসুর শওমান বলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের উপত্যকার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে , সেখানে তারা নিজেরা বসতি স্থাপন  করতে চায়। শওমান  আল জাজিরাকে বলেছেন, এই এলাকাটি তিন সপ্তাহ ধরে ইসরাইলিদের খুব ভারী ভূমি আক্রমণের শিকার। তারা গাজা উপত্যকার উত্তরে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি নির্মূল করার চেষ্টা করছে … এবং তাদেরকে আরও দক্ষিণে ঠেলে দিচ্ছে, যাতে ইসরাইলিদের জন্য একটি বাফার জোন তৈরি করা যায় এবং তারপর সেখানে বসতি তৈরি করা যায়।

সূত্র : আলজাজিরা

mzamin

No comments

Powered by Blogger.