পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ভারতীয় দূতের একঘণ্টা বৈঠক

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেছেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। রোববার বিকালে সেগুনবাগিচায় ওই আলোচনা হয়। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার অবস্থা ও অবস্থানের বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেয়েছে কিনা- তা নিয়ে ধূম্রজাল  তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের যেকোনো আলোচনায় কোনো না কোনো ফর্মে ‘হাসিনা ইস্যুটি উঠবে এটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু না, আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ভারতীয় দূত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের আলোচ্যসূচিতে অন্য অনেক কিছু ছিল। এ বিষয়ে তাদের কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, মেডিকেলের ভিসার পাশাপাশি তৃতীয় দেশের ভিসাপ্রার্থীদের ভারতের ভিসা দেয়ার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রয়োজনীয় জনবল কাজে যোগ দিলে ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাতে জানানো হয়, ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন কিছু প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মীদের কাজে ফেরত আনা, ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমের সর্বশেষ অবস্থা, রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট রিনিউয়াল, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আটক হওয়া ভারতীয় জেলেদের আইনি প্রক্রিয়া শুরুর জন্য কনস্যুলার অ্যাকসেস, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটকা পড়া বাংলাদেশি জেলেদের দ্রুত প্রত্যাবাসন এবং ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)সহ রুটিন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকাদি নিয়মিতভাবে আয়োজন বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতীয় দূতের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। স্মরণ করা যায়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরা অবস্থায় ৭১ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। তাদের সঙ্গে দেখা করে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করতে দ্রুত কনস্যুলার অ্যাকসেস চায় ভারতীয় হাইকমিশন। এদিকে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে ১২ জন বাংলাদেশি জেলে আটক রয়েছেন, তাদের ভারতীয় জলসীমা থেকে আটক করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাদের দ্রুত ফেরাতে চায় বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনের আগে নয়াদিল্লিতে সর্বশেষ এফওসি হয়েছে ভারতের সঙ্গে। এ বছর শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে পরবর্তী এফওসি ঢাকায় হওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত জুলাই-আগস্টের নারকীয় ও বীভৎস হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৪টি। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া। তদন্ত করছে জাতিসংঘও। গত ১৭ই অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তাকে হাজির করতে বলা হয়েছে ১৮ই নভেম্বরের মধ্যে। এ অবস্থায় রোববার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় দূত। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় শেখ হাসিনাকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ফেরত দিতে বাধ্য ভারত। তাদের মতে, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই এখন আর রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। ভারত বন্দি বিনিময় চুক্তি মানবে কিনা; সেটির ওপরই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো পুরোপুরি নির্ভর করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.