ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তুলকালাম: ফল পরিবর্তনের আন্দোলন

এইচএসসি’র সাতটি বিষয়ে অটোপাসের দাবিতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে গতকাল চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। একপর্যায়ে তারা ভেতরে ঢুকে পড়েন। ভাঙচুরও করেন। সে সময় তাদের ওপর হামলা হয়। এতে ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হন। বেলা সাড়ে ১২টার পর ‘এইচএসসি ব্যাচ-২০২৪’ এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেলা ১টার দিকে মিছিলটি বোর্ডের ফটকের সামনে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে পাস করা ও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ছিলেন।  একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, বোর্ডের ভেতরে তাদের ওপর হামলা হয়। এই হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা এই হামলার বিচার চান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের নানা অসঙ্গতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে বোর্ডে এসেছিলেন। তবে, বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা করেন। যদিও বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, হুড়োহুড়িতে কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের নানা সম্পদ বিনষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বাতিল ৬টি পরীক্ষা যে পদ্ধতিতে ম্যাপিং করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে তাতে চরম বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সিলেট মাদ্রাসা বোর্ডের মাত্র ৩টি পরীক্ষা হয়েছে, কিন্তু তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিং করায় রেজাল্ট ভালো হয়েছে। অথচ আমরা ভালো পরীক্ষা দিয়েও ফেল করেছি। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।

চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলনে আসা শাফিন মাহমুদ বলেন, চরম বৈষম্যের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার যত বেশি পরীক্ষা হয়েছে সে বোর্ডের শিক্ষার্থীরা তত বেশি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো বোর্ডে ৬ পরীক্ষা দিয়েছে, কেউ ৩টি পরীক্ষা দিয়েছে। অথচ রেজাল্টের ক্ষেত্রে কম পরীক্ষা দেয়া বোর্ডের রেজাল্ট ভালো হয়েছে। এই বৈষম্য আমরা মানি না। অবিলম্বে ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে নতুন পদ্ধতিতে রেজাল্ট প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

এক পর্যায়ে সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারা আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, যারা এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি তারা অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষাগুলোতেও অটোপাস দাবি করেছেন। আমার রুমসহ বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেছেন।

এদিকে মেডিকেল রিপোর্টার জানান, বৈষম্যহীন রেজাল্টের জন্য প্রতিবাদ করায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ঘটনায় ১১ জন আহত হন। তাদের মধ্যে অন্যতম- মোসা. তাহমিনা, মো. সাগর, মো. শাহরিয়ার, মো. ওয়াহিদ, মোসা. ফাহমিদা আক্তার, আশুতোষ। গতকাল দুপুর তিনটার দিকে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়।

আহত এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বৈষম্য করে রেজাল্ট প্রকাশ করেছে। আমাদের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের মূল্যায়ন করে এইচএসসি রেজাল্ট দেয়ার কথা। কিন্তু সব সাবজেক্টে এ+ পেয়েছে কিন্তু একটি সাবজেক্টে সে ডি গ্রেড পেয়েছে, এটা কেন করলো। আমাদের কথা হচ্ছে যেহেতু আমাদের এসএসসি রেজাল্ট দেখে মূল্যায়ন করার কথা ছিল, সেটা বিবেচনা করে এইচএসসি রেজাল্ট প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়েছে। তাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী-কর্মকর্তারা লাঠিসোটা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমরা আহত হই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আহত হয়ে মোট ১১ জন এসেছিল- তাদের মধ্যে ৬ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে আরও ৫ জনকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.