সিলেটে কার্যক্রম শুরু দুই পিপি’র: একাংশের ক্ষোভ

সিলেটে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দুই পিপিকে নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই পিপি’র নিয়োগকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে রয়েছেন। দু’জনেরই কক্ষে দিয়েছেন তালা। এই অবস্থায় রোববার দুই পিপি যোগদান করে কাজ শুরু করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সিলেটের আদালতে নতুন করে পিপি, এডিশনাল পিপি ও এপিপি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত সপ্তাহের শেষ দিকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন সিলেটে এসে পৌঁছে। এরপর থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের একটি অংশ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবারের সাবেক সভাপতি এটিএম ফয়েজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিবের নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। বৃহস্পতিবার তারা এ নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। গতকাল সকালে পিপি’র রুমের সামনে অবস্থান নেন তারা। একপর্যায়ে তারা দু’জনের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এডভোকেট এটিএম ফয়েজ আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে আসলেও বিগত খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

দলে তার সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সেবা প্রদানে তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এক সময় আইনজীবী ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি  দেয়া হয়। তিনি দীর্ঘ দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রান্ট হয়ে সপরিবারে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় পাড়ি জমান। গত ৫ই আগস্টের খুনি হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে তিনি পিপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন। যা সিলেটের আইন অঙ্গনের সর্বস্তরের আইনজীবীদের মর্মাহত করেছে। নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এটিএম ফয়েজকে পরিবর্তনের দাবি জানান। বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইন ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়; দুটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। একপর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয়তলায় এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিবকে দেখে আইনজীবীরা ক্ষেপে যান এবং তাকে লাঞ্ছিত করেন। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপে স্থান ত্যাগ করেন মুজিব। পরে আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন; জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ- সভাপতি এডভোকেট মুহিবুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক জিপি সিনিয়র এডভোকেট আক্তার হোসেন খান, মহানগর বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আহমদ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আশরাফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাসান আহমদ পাটওয়ারী রিপন প্রমুখ।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে নিয়োগ পাওয়া পিপি এডভোকেট হাসান পাঠওয়ারী রিপন জানিয়েছেন- সিলেট থেকে আইনজীবী ফোরামের যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল সেখানে সিনিয়র, জুনিয়রটি রক্ষা করে আইন পেশায় অভিজ্ঞ আইনজীবীদের একটি তালিকা প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু সেই তালিকা পুরোপুরি অনুসরণ না করায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইনজীবীরা। তিনি জানান- সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আশিকুর রহমানকে এডিশনাল পিপি করা হয়েছে। অথচ তার থেকে অনেক জুনিয়র একজনকে তার উপরে এডিশনাল পিপি করা হয়েছে। এটা কোনো ভাবে মেনে নেয়া যায় না। এদিকে; আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্বে একাংশের আইনজীবীরা ক্ষোভ দেখালেও সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে যোগদান করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ এবং নারী ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব। কাজে যোগ দিয়ে তারা আদালতের কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন নারী ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট মুজিব। তিনি জানান- সকালেই আমরা কাজে যোগদান করেছি। এ ছাড়া সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকদের সঙ্গে দেখাও করেছি। তিনি বলেন- বঞ্চিত হওয়ার কারণে মুষ্টিমেয় কয়েকজন আইনজীবী ক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এটা সাময়িক। আমরা বসে এ ক্ষোভের প্রশমন করতে পারবো। এ ক্ষোভ থাকবে না। তিনি বলেন- আদালত প্রাঙ্গণে আমার সঙ্গে কেউ কোনো খারাপ আচরণ করেননি। বরং সবাই সহযোগিতা করছেন।

No comments

Powered by Blogger.