বাংলাদেশে ‘অশুভ শক্তি’ মোকাবিলায় সোচ্চার হাসিনা- বিরোধী শক্তি :এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদন
১৫ই আগস্ট ‘অ্যান্টি-হাসিনা বাংলাদেশিস অন এলার্ট ফর ‘এভিল র্যামন্যান্টস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশিয়াভিত্তিক গণমাধ্যম এশিয়া টাইমস। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যেন পুনরায় স্বৈরশক্তির উত্থান না ঘটে সে বিষয়ে গভীর মনোযোগী রয়েছে দেশটির তরুণ শিক্ষার্থীরা। আবু হামজা তারেক নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেছেন, এটি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবশিষ্ট অংশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পতনের পরে এখনো দলটি দেশে নৈরাজ্যকর এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে ওই শিক্ষার্থী।
গত কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় বলা হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকারকে উচ্ছেদ করতে ১৫ই আগস্ট থেকে ‘প্রতিবিপ্লবের’ চেষ্টা হতে পারে। এই বার্তা ছড়ানোর মধ্যেই হঠাৎ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে সমর্থকদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানায়। বিশেষ করে তারা ১৫ই আগস্টকে শোক দিবস হিসেবে পালন করার নামে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে সচেষ্ট বলে মনে করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে হাসিনা সরকার এবং তার দল। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার মায়ের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে আসছেন। তিনি সেখানে দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি। কেননা, এটা গণমুখী একটি দল। হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর জয় তার এক বার্তায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আত্মার মাগফেরাতের জন্য ধানমণ্ডিতে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। মূলত ওয়াজেদ তার বার্তায় আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় জড়ো হওয়ার ইঙ্গত দিয়েছেন বলে ধারণা ছাত্র-জনতার। যদি আওয়ামী লীগ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারে তাহলে হাসিনার পতনের পর এটাই হবে তার দলের প্রথম বড় কোনো সমাবেশ। তবে ছাত্র-জনতা এই সমাবেশকে নিছক কোনো শোক সমাবেশ হিসেবে মনে করছে না, তারা এই সমাবেশের আহ্বানকে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছে।
গত কয়েকদিন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশের একাধিক সমাবেশের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৫ই আগস্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকট হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সমাবেশগুলো করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ। শাহবাগে টানা দুইদিন সমাবেশের ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ জনগণ। রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট। হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সংখ্যালঘুর বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এতে বেশ কয়েকজন আওয়ামীপন্থি সংখ্যালঘুর হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিকে সমর্থন করে বলেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন; কারণ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার যে কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক লেন্সের পরিবর্তে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে অতিরঞ্জিত করেছে এবং মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। যেমন তারা বলেছে যে, বাংলাদেশে কয়েক ডজন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাই বলে মনে করেন নাবিলা ইদ্রিস। তিনি বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করি যে, আওয়ামী লীগের কর্মী ও নেতারা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সংখ্যালঘুদের ব্যানারে সমাবেশ করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।
No comments