যেভাবে লাকসামের ত্রাস হয়ে ওঠেন মহব্বত
এমনকি জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে ক্যাশ থেকে লাখ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। বিএনপি সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ ঘোষণা দেয়। নোয়াখালীতে ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের। সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য কুমিল্লা উত্তর জেলার দলীয় নেতাকর্মীরা ট্রাক, বাস করে নোয়াখালী যাওয়ার পথে রওয়ানা দিলে লাকসামে মহব্বত আলীর নির্দেশে তার সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে ৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে আহত করে। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামের তার গ্রামের বাড়ি পাশাপুরে বিএনপি’র কর্মী সম্মেলন আয়োজন করে। ওই সম্মেলনে মনোহরগঞ্জ লাকসাম থেকে নেতাকর্মীরা যাতে না যেতে পারে তার জন্য বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা পাহারা দেয়। যারা ওই পথে রওয়ানা দেয় তাদেরকে পিটিয়ে আহত করে। থানা পুলিশের নিকট তাদেরকে সোপর্দ করে। এক সময় মহব্বত আলী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তার ভগ্নিপতি তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী পর্যায়ে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার এপিএস রতনকে সরিয়ে দিয়ে মহব্বতকে ওই দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব দেয়ার পরেও ভেসপা মোটরসাইকেল চালাতেন। এরপর রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। চলাচল করতেন মারসিটিজসহ ৩টি গাড়িতে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ চলতে থাকে লাকসামে। প্রতিটি কাজের কোনো টেন্ডার হতো না। প্রত্যেকটি কাজ ৫% লেসের স্থলে ২০ থেকে ৩০% এভাবে হতো। এসব কাজের ঠিকাদার তার মন মতো ব্যক্তিদের লাইসেন্সে কাজ করতো। এভাবে পুরো টাকা মহব্বতকে দিতে হতো। এ ছাড়া প্রতি কাজের বিপরীতে ১৫% টাকা নিতো। বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ কোনোটির টেন্ডার হলে যারা কাজ পেতো, তাদেরকে দেয়া হতো না। যেসব প্রকল্পের কাজ লাকসাম উপজেলায় বাস্তবায়ন হয়েছে প্রত্যেকটি কাজের গুণগতমান খুব খারাপ। এ ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থী হলে প্রত্যেক চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ও মেম্বারগণের নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা করে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা টাকা দিতেন তাদেরকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতেন। গত ১৫ বছর পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটারবিহীন নির্বাচন হতো। শেখ হাসিনা পদত্যাগের দিনও গত ৫ই আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রত্যেকদিন তার সন্ত্রাসী দল সশস্ত্র অবস্থায় প্রতিটি রাস্তার মোড়ে পাহারায় থাকতো। যাতে বিএনপি ও জামায়াতের কোনো মিছিল বের করতে না পারে।
কে এই মহব্বত
সাবেক স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক। তার বাবার নাম আব্দুল আজিজ, তাদের বাড়ি এক সময় হাজীগঞ্জ এলাকায় ছিল। তার বাবায় লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে বিচানাপট্টিতে একটি ট্রাঙ্ক তৈরির দোকান ছিল। সে সুবাদে তৎকালীন থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরির পাশে নবাব কলোনিতে থাকতেন। পরবর্তী পর্যায়ে পাইকপাড়া ডুরিয়া বিষ্ণুপুর এলাকায় জায়গা ক্রয় করে এবং একটি বাড়ি নির্মাণ করে। নবাব কলোনিতে থাকা অবস্থায় তাজুল ইসলামের বোনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মহব্বত আলী টানা ৩ বার বিনা ভোটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকদের নির্যাতন
কোনো সাংবাদিক আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে, তাকে নির্যাতন করতো মহব্বতের সন্ত্রাসী বাহিনী। গত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ থেকে একজন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা ও প্রচারণা চালায় এবং গণসংযোগ করেন। ওই গণসংযোগের সংবাদ প্রকাশ করলে স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল জলিলকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে পঙ্গু করে দেয় মহব্বত। দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসার পরও এখনো সুস্থ হয়নি। শুধু জলিল নয়। দৈনিক দিনকালের সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিমকে নির্যাতন করে দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া করে।
সিএনজি, বাস ও অটো স্ট্যান্ড থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়
লাকসাম পৌর এলাকায় ৫টি সিএনজি ও ১০টি অটো ও একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হতো। প্রতিটি সিএনজি ও বাসস্ট্যান্ডের জন্য আলাদা আলাদা লোক নিয়োজিত ছিল। টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো। তিশা বাস কাউন্টারে আলাদা লোক ছিল। এসব চাঁদা প্রতিদিন যমুনা ব্যাংকে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হতো।
No comments