৯১ বছর বয়সে ষষ্ঠ বিয়ের দুই মাস পরেই মারা গেলেন, কে এই বিলিয়নিয়ার

কনে ৪২ বছর বয়সী সিমোন রাইল্যান্ডার, বর ৯১ বছর বয়সী অস্ট্রীয় ধনকুবের রিচার্ড রিচার্ড লুগনার। ১ জুন ভিয়েনা সিটি হলে এই জুটি সারলেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সেটা ছিল লুগনারের ষষ্ঠ বিয়ে। সেদিনই লুগনার সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটিই তাঁর শেষ বিয়ে। এর মাত্র দুই মাস পর আগস্টের ১২ তারিখে মারা যান তিনি। রিচার্ড লুগনার মারা যাওয়ার পর স্ত্রী সিমোন তাঁর স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে লেখেন, ‘তুমি ছিলে আমার জীবনের স্বপ্ন। আর যখন আমি তোমার চোখের মাঝে নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছি, তখনই বুঝেছিলাম যে আমি তোমার হয়ে গেছি।’

কিমের সঙ্গে ৫ কোটি টাকায় এক সন্ধ্যা

মৃত্যুর পরে নতুন করে আলোচনায় এই ধনকুবের। আলোচনার বিষয়, তারকা নারীদের সঙ্গে তাঁর বর্ণময় জীবন। রিচার্ড লুগনার প্রায়ই ভিয়েনা স্টেট অপেরা হাউসে পছন্দের নারীদের সঙ্গে সন্ধ্যা উপভোগ করতে পছন্দ করতেন। বছরে অন্তত একবার নামীদামি তারকাকে ডেকে আনতেন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রচারণাও হয়ে যেত। একটা সন্ধ্যা কাটাতে যদি খরচ হয় ৫ লাখ ডলার বা ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, সেটা কি একটু বেশি বেশি মনে হয়? লুগনারের কাছে অবশ্য তা মনে হতো না।

২০১৪ সালে তিনি মার্কিন মডেল কিম কার্ডাশিয়ানের সঙ্গে এক সন্ধ্যা উপভোগ করেন। কিম লুগনারের ভালোবাসার কথা শোনেন। নাশতা করেন। একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে পোজও দেন। তবে লুগনারের ইচ্ছা ছিল কিমের সঙ্গে নাচবেন। সেটা আর হয়নি। পরে কিমের সঙ্গে সান্ধ্য–আড্ডার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘নাচ হলো না। কিম বিরক্তিকর।’

কিম কার্ডাশিয়ান, পামেলা অ্যান্ডারসনসহ জোয়ান কলিন্স, জেন ফন্ডা, প্যারিস হিলটনকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে লুগনারের সঙ্গে। ফেব্রুয়ারিতেও ভিয়েনা অপেরায় এলভিস প্রেসলির সাবেক স্ত্রী প্রিসিলা প্রেসলির সঙ্গে বল নাচে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল রিচার্ড লুগনারকে। সেই সময়ও তাঁর শরীরের অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না। কয়েকটি অস্ত্রোপচারের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে।

কীভাবে এত ধনী হয়ে উঠেছিলেন লুগনার

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মধ্য নিয়ে নিজের ভাগ্য গড়েছেন লুগনার। ১৯৭৫ সালে লুগনার তাঁর প্রথম বড় প্রকল্প ‘ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টার’ নির্মাণের কাজে হাত দেন। আইনি বাধা পেরিয়ে ১৯৭৭ সালের ১ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু করেন লুগনার। ১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর কাজ শেষ হয়। অস্ট্রিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মসজিদটির উদ্বোধন করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি লুগনারকে।

ধীরে ধীরে তাঁর নামের আগে যুক্ত হয় ‘কনস্ট্রাকশন টাইকুন’। লুগনারের সবচেয়ে দামি সম্পত্তির মধ্যে একটি হলো ভিয়েনার ‘আইকনিক লুগনার সিটি শপিং সেন্টার’। ১৯৯০ সালে তিনি এটি তৈরি করেছিলেন।

বিবাহিত জীবন কেটেছে অস্থিরতায়

লুগনার তাঁর জীবনে ছয়বার বিয়ে করেছিলেন। তবে লুগনারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কসহ নানা কারণে দাম্পত্য কলহ ছিল তাঁর সংসারের সব সময়ের সঙ্গী। আর এসব সম্পর্ক নিয়ে লুগনার নিজেই কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। অবশ্য এর ফলে ‘নেগেটিভ পাবলিসিটি’ বা দুর্নামের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রচারও হয়েছে দেদার।

১৯৬১ সালে ক্রিস্টিন জিমিনারকে বিয়ে করেন লুগনার। প্রথম বিয়ে টিকেছিল ১৭ বছর। ১৯৭৮ সালে বিচ্ছেদ হয় ক্রিস্টিনের সঙ্গে। পরের বছর ১৯৭৯ সালে কর্নেলিয়া লাফার্সওয়েলারকে বিয়ে করেন লুগনার। এই বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার বছর। দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের এক বছর পেরোতে না পেরোতেই ১৯৮৪ সালে সুজান ডিট্রিচের সঙ্গে বিয়ে হয় এই ধনকুবেরের। পাঁচ বছর পর ১৯৮৯ সালে এই দম্পতি আলাদা হয়ে যান।

লুগনার তাঁর চতুর্থ স্ত্রী ক্রিস্টিনা লুগনারের সঙ্গে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বছর সংসার করেন। ২০১৪ সালে তিনি পঞ্চমবার গাঁটছড়া বাঁধেন মডেল ও অভিনেত্রী ক্যাথি স্মিতজের সঙ্গে। লুগনার ও ক্যাথির বয়সের পার্থক্য ছিল ৫৭ বছর। এই দম্পতি মাত্র ২ বছর পরেই ২০১৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

২০২১ সালে সিমোন রাইল্যান্ডারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেন রিচার্ড লুগনার। ২০২৩ সালে তাঁরা বাগদানের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। মৃত্যুর মাত্র দুই মাস আগে সিমোনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এই সিমোনই এখন রিচার্ডের সিংহভাগ সম্পদের মালিক।

লুগনারের সম্পদ এখন কারা ভোগ করছেন

২০২২ সালের হিসাব অনুসারে, রিচার্ড লুগনার ২০০ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার মালিক। লুগনার বেঁচে থাকতে তাঁর সবচেয়ে দামি ভবন ‘আইকনিক লুগনার সিটি শপিং সেন্টার’–এর মালিকানা ষষ্ঠ স্ত্রী সিমোন রাইল্যান্ডারের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। মৃত্যুর পর আইন অনুসারে স্ত্রীই এখন এই শপিং সেন্টারের একক মালিক। এ ছাড়া লুগনার চার সন্তানের পিতা। এঁরা হলেন আলেকজান্ডার, আন্দ্রেয়াস, নাদিন জেনিন ও জ্যাকলিন লুগনার। লুগনার এর আগে দ্য ইনডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এই সন্তানদের জন্যও তিনি পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে গেছেন। লুগনার বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর যা থাকবে, তা সবার জন্য যথেষ্ট। এমনকি যথেষ্ট থেকেও বেশি।’

No comments

Powered by Blogger.