বাংলাদেশের অস্থিরতা গ্লোবাল সাউথের জন্য উদ্বেগজনক ঝড়োবাতাসের সংকেত -সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন
২০২৩ সালে পাকিস্তানেও একই রকম দৃশ্য দেখা গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তখন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা একটি সেনা গ্যারিসন এবং কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল পাকিস্তান।
এসব আন্দোলনের নেপথ্যে একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দুর্দশা। কেননা দেশগুলোতে প্রবল উন্নয়নের ঢেউ তুললেও বাস্তবে এসব উন্নয়নের পেছনে লুকিয়ে থাকে ভয়াবহ ঋণের বোঝা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান সবাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেলআউটের মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তান সম্প্রতি তার ২৪ তম আইএমএফ বেলআউটের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। শ্রীলঙ্কা তার ২০২২ সালের অবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বেলআউটের মধ্যে রয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক এমন দুর্দশার জন্য পশ্চিমারা চীনের অস্বচ্ছ ঋণদান এবং জোরপূর্বক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে থাকে। পাকিস্তানের বৈদেশিক দ্বিপাক্ষিক ঋণের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি, মালদ্বীপের ৬০ শতাংশের বেশি, শ্রীলঙ্কার ৫০ শতাংশের বেশি এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি চীন থেকে নেয়া। বেইজিং প্রকল্পের জন্য ৯৯ বছরের ইজারা পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর প্রকল্পটি চীনের কথিত ঋণ-ফাঁদ কূটনীতির বর্ণনার সমর্থক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা না করেই সরকারগুলো চীনের কাছ থেকে এভাবে ঋণ নিতে থাকে। রাজাপাকসের অধীনে শ্রীলঙ্কা, হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ এবং একদল সামরিক নেতার অধীনে পাকিস্তান তাদের তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী জনগোষ্ঠীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না করে একের পর এক ঋণে জর্জড়িত করে দেশের জনগণকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি সার্বিক দিক থেকে ভয়াবহ রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানের বেশ কিছু দেশ বৈদেশিক রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং ২০২১ সালে পাকিস্তানের প্রায় ১০ শতাংশ প্রবাসী আয় থেকে অর্জন করেছিল। অর্থনীতি প্রধানত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হলেও পর্যটন খাত থেকেও কিছু আয় করে শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীনরা। তারা এর জনমতের ওপর নির্ভর করে। যদিও ভারতের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভূমিধস জয় পাবে বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। যাইহোক, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আন্দোলনের ইন্ধনদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ৫ কোটির বেশি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী রয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী প্রায় ২ কোটি। বিশাল এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সম্ভবত বাংলাদেশের সরকারের ক্ষমতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছিল। ফলত তারা আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল।
দিক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ তরুণরা, যাদের বেশির ভাগই বেকার। বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রায় ১৮ মিলিয়ন তরুণ কোন কাজ করছে না। অন্যদিকে লেখা পড়া শেষ করে ৪ লাখের বেশি নাগরিক সরকারি চাকরিতে মাত্র ৩ হাজার পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই পরিসংখ্যানের ওপর নজর দিলেই অবাক হতে হবে না যে, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাই হাসিনাকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে অপসারণে বাধ্য করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখন তরুণদের নিয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এখানের দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশই ১৮ বছর বয়সী তরুণ। কার্যত তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় একটি প্রচ্ছন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশগুলো। এমনকি ভারতেও একই অবস্থা। যদিও দেশটিকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিন্তা করা হয়। ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচনের বিস্ময়কর ফলাফল দেশের তরুণদের উচ্চ বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান বৈষম্য তৈরি করছে। তরুণদের এভাবে বেকার রেখে ক্ষমতা টিকে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ রকমের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
No comments