কে হচ্ছেন পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব? সেগুনবাগিচায় অন্যরকম অস্থিরতা by মিজানুর রহমান
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পটপরিবর্তনের পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ দিনের চাপা ক্ষোভের যে বিস্ফোরণ ঘটেছে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা অবহিত। এটি নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার আদেশ জারি হয়েছে। অন্য ক্যাডার থেকে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কার্যক্রমে স্বাতন্ত্র্যতা থাকায় কিছু পদক্ষেপ দৃশ্যমান হতে সময় লাগছে জানিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি অনানুষ্ঠানিক আলাপে গত সপ্তাহে মানবজমিনকে বলেন, পররাষ্ট্র সচিবসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তার বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র। রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে কিছু অর্ডার ইস্যু হয়েছে, বাকিটা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য শূন্য পদগুলোর বেটার রিপ্লেসমেন্ট নিয়েও সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হচ্ছে। সরকারের ওই প্রতিনিধি বলেন, ফরেন সার্ভিসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পররাষ্ট্র সচিব পদে একজন কম্পিটেন্ট অফিসার পাওয়া। বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকা বিশেষত তার একটি বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। তবে তার ‘পেশাদারিত্ব’ নিয়ে আগে তেমন প্রশ্ন ছিল না। সার্বিক দিক বিবেচনায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসুদ বিন মোমেনকে সরকার রাখবে কিনা? তা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। একটি সূত্র অবশ্য বলছে, বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব বিদায়ের প্রস্তুতিতেই রয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সকলের কাছে তিনি ‘সম্মানজনক বিদায়’ চেয়েছেন।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতকে ঢাকায় ফেরার জরুরি আদেশ, পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগের গুঞ্জন: চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিনকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় ফেরার আদেশ জারি হয়েছে। গত ১৭ই আগস্ট আদেশটি জারি হয়। জসিম উদ্দিনের উদ্দেশ্যে জারি হওয়া আদেশে বলা হয়, ‘আপনাকে সদর দপ্তর ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অতএব বাংলাদেশ দূতাবাস বেইজিংয়ে আপনার বর্তমান দায়িত্বভার ত্যাগ করে অবিলম্বে সদর দপ্তর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ সচিব পদমর্যাদায় চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দু’বছরের কম সময় দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিনকে চটজলদি ঢাকায় ফেরার আদেশ জারির প্রেক্ষাপটে এই গুঞ্জন উঠেছে যে, পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তিনি নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের ওই কর্মকর্তাই হবেন হেডকোয়ার্টারে সচিব পদমর্যাদার একমাত্র কর্মকর্তা। অবশ্য পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার দৌড়ে মো. জসিম উদ্দিনের সিনিয়র এবং জুনিয়র ব্যাচের আরও দু’জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে তাদের দু’জনের কেউই সচিব পদে কাক্সিক্ষত পদোন্নতি পাননি। ১০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বাণী সংক্রান্ত জটিলতায় বিভাগীয় মামলা থাকায় তার পদোন্নতি আটকে গেছে। এখন এটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন তিনি। তাছাড়া ১৫তম ব্যাচের ফার্স্ট রিয়াজ হামিদুল্লাকে ঢাকায় ফেরানো হয়েছে গত মাসে। গত জুন থেকে তার ব্যাচের (পররাষ্ট্র ক্যাডার) সচিব পদে পদোন্নতির প্রস্তাব ঝুলে আছে। ওই দুই কর্মকর্তার মধ্য থেকে কাউকে পররাষ্ট্র সচিব পদে পদায়ন করতে হলে সবার আগে তাদের সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হবে। স্মরণ করা যায়, পররাষ্ট্র সচিবের মতো অতিব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ যেকোনো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই হয়।
No comments