যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই
তিনি বলেন, আমাদেরকে এখন অত্যন্ত ধৈর্য ধরে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। এই সরকার এসেছে, এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। এই কথা আমরা বার বার বলছি, যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদেরকে দিতে চাই। নির্বাচন ছাড়া তো সম্ভব নয়, নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে, আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। সেজন্য ধৈর্য ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে আশাবাদী হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তিনি একটা রোডম্যাপ দেবেন, সেই রোডম্যাপ আমরা কিন্তু ফর ট্রানজিসেন টু ডেমোক্রেসি এটা আমরা কিন্তু উনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।
সংস্কারের কথা বলেছেন, সেই সংস্কারগুলো কোন কোন বিষয়, সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন, আমি জানি- সেগুলো এই অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না। তবে সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা থাকলে আরও বেশি করে ধারণা করতে পারতাম যে, ঘটনা আসলে ভালোর দিকে যাচ্ছে। যাই হোক আমাদের প্রত্যাশা ভালোর দিকে যায়, এটা জনগণের প্রত্যাশা।
কবে নির্বাচন হবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত- প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করবো, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে যাবেন, খুব দ্রুত যাবেন এবং তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুলিশ স্টেট যাতে কেউ না বানাতে পারে- সেই অবস্থা তৈরি করবেন। অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা এটাই চাচ্ছি, সব সময় যে আমরা পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না, পুলিশ আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, পুলিশ প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে বলে দেবে যে, এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না অথবা আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আমাদের সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলেদেরকে গুলি করবে, এটা আমরা আর দেখতে চাই না। এটা যদি উনারা করে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, গায়েবি মামলা হয়েছে, সেগুলোকে অবিলম্বে তুলে ফেলতে হবে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার মামলা চলে গেছে, উঠানো হয়েছে, আরেকজন উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে, সাজা ছিল- সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে। আমাদের একজন মানুষও নাই, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এখানে আমরা যারা বসে আছি- যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নাই। আমাদের আশা এই মামলাগুলো ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
পুলিশ রিফর্মের বিষয় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে তিনি বলেন, আমরাও এটি চাই। সেদিন আইজিপি বলেছেন, পুলিশকে জনগণের পুলিশ তৈরি করা হবে, এটাকে আদর্শ পুলিশ তৈরি করা হবে। আমরা এটা চাই, খুব দ্রুত চাই।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোববার যে ঘটনা ঘটেছে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার এবং কিছু লোকজন, পোশাকধারী লোক তারা গোলযোগ সৃষ্টি করে সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ছাত্ররা সেটাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত, এটা ভালো লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যারা পরাজিত তারা এখন আবার বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করছে এ বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। তাই জনগণকে আহ্বান জানাবো, আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন, এই বিষয়গুলোকে কখনো কোনো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা এখনো প্রশাসনে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছি, যারা এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে মদত দিয়েছে, তাদের সাহায্য করেছে এবং বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা জড়িত। তাদের চেহারা আমরা দেখতে চাই না। আবারো বলছি, দয়া করে অতি দ্রুত এদের অপসারিত করে যারা দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের নিয়ে এসে সেই প্রশাসন চালানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এটার জন্য জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
No comments