গাজীর কারখানায় আগুন -লুট করতে গিয়ে নিখোঁজ ১৭৬ by জয়নাল আবেদীন জয়

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও গাজী গ্রুপের মালিক গোলাম দস্তগীর গাজীর টায়ার কারখানায় দ্বিতীয়বারের মতো আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার ওই কারখানাতে গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট টানা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন দেয়া পর্যন্ত চলে লুটপাট। লুটপাট করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজ বলে ফায়ার সার্ভিসের কাছে দাবি করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। ইতিমধ্যে স্বজনরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম ঠিকানা দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দস্তগীরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অনুসারীরা গা ঢাকা দেয়। সেদিন বিকাল থেকেই গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক পাম্প কারখানাসহ তার মালিকানাধীন জি পার্ক, বসতবাড়ি ও পূর্বাচলের বাড়িতে লুটপাটের পর আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে গত ২৪শে আগস্ট গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২৫শে আগস্ট এ খবর রূপগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন আবারো রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করেন।

স্থানীয় বেশকিছু বিএনপি নেতাকর্মীরা এসে ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দিলে তা না মেনে ভাঙচুর ও লুটপাট চলতেই থাকে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ভেতরের ৬ তলা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন কয়েক শতাধিক লোকজন। ওই ভবনে কেমিক্যাল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভেতরে লুটপাট নিয়ে দুটি পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন লেগে যায়। এ সময় আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায়। খবর পেয়ে ঢাকার ফুলবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস, ডেমড়া ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিস, আদমজী ফায়ার সার্ভিস, সিদ্দিকবাজার ফায়ার সার্ভিসসহ ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে ব্যবহার করেন টিটিএ। সন্ধ্যা ৬টা অবধি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এদিকে, ভবনে প্রবেশ করে নিখোঁজ হয়েছেন এমন ব্যক্তির খোঁজে গাজী টায়ার কারখানায় ভিড় করছেন স্বজনরা। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মৈকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাবো, বরাবো, চনপাড়া,  মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকায়।

ভয়াবহ এই আগুনে কারখানার আশপাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প কলকারখানা এবং এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যাপারে বলা যাবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনরা আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছেন।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দলীয় নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে সাংগঠনিকভাবে দল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাজী সাহেব অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের রুটি-রোজগারের জায়গা এই কারখানা। কারখানা ধ্বংস করলে এখানে কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কোথায় যাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ কোনো প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে। প্রচলিত আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.