মৌলভীবাজারে অসহায় মানুষ -তৃতীয় দফায় বন্যা by ইমাদ উদ দীন

ধীরগতিতে কমছে বানের পানি। জেলার নদীগুলোর পানি এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কমতে শুরু করেছে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর উজান এলাকায় বানের পানি। তবে নদী ও হাওরের ভাটি এলাকায় এখনো ঘরবাড়িতে হাঁটু ও কোমর পানি। সময় যত যাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র, অন্যত্র আশ্রয় নেয়া ও নিজ বসতভিটায় ঝুঁকি নিয়ে থাকা বন্যার্তরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটসহ স্যানিটেশন আর পানিবাহিত নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলার ৭টি উপজেলার নদী ও হাওর তীরের প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত। এর আগে কখনো এমন আগ্রাসী ও রাক্ষুসে বন্যা দেখেননি কেউ। মাত্র ঘণ্টা দুয়েক এর ব্যবধানে কিছু সামাল দেয়ার আগেই আকস্মিক এ বন্যায় চোখের নিমিশে সবই শেষ। কোনো রকম প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও সব হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।

বানভাসিরা বন্যার প্রথমদিনের ভয়াবহতার ভয় আর দুঃসহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। স্বপ্নের রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা এখন দ্বিগুণ হচ্ছে। এমনটি জানালেন জেলার মনু, ধলাই, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকার বন্যায় দূর্ভোগগ্রস্তরা। জানা যায়, জেলা জুড়ে এখন ৩য় দফা বন্যা চলমান। এখন বৃষ্টি থামলেও ধীরগতিতে নামছে পানি। জেলার নদী তীরের বাসিন্দারা নতুন করে প্রথমবারের মতো বন্যা আক্রান্ত হলেও হাওর তীরের বাসিন্দারা এনিয়ে ৩য় দফায় বন্যা আক্রান্ত হলেন। আগের দু’দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো বন্যা আক্রান্ত হলেন। জেলার নদী ও হাওর তীরের গ্রামগুলোর বন্যাকবলিত অনেক মানুষই তাদের গবাদিপশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। অনেকেই নানা কষ্টে ঘরে মাচাং বেঁধে চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।

তারা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পেলেও গ্রাম এলাকায় ত্রাণ সহায়তা মিলছে কম। এমন দুর্দিনে তারা এখনো সরকারি ত্রাণ সহায়তা ও জরুরি চিকিৎসাসেবা পাননি। ব্যক্তি, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ হলেও তা শৃঙ্খলিত না হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন দুর্ভোগগ্রস্তরা। আশ্রয়কেন্দ্র বা যোগাযোগ ব্যবস্থা যে এলাকায় ভালো সেখানে ত্রাণ যাচ্ছে বেশি। বন্যাকবলিত অনেক গ্রামেই দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অসহায় বন্যার্তরা পাচ্ছেন না ত্রাণ সহায়তা। তারা জানান, এই সময়ে ক্ষেত কৃষি না থাকায় নেই আয় রোজগারও। বন্যায় সর্বস্বান্ত কৃষক, মৎস্যজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের হতদরিদ্র মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় ভুগছেন। তারা অভিযোগ করে বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে হাওর ও নদী তীরের অধিকাংশ বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিচতলায় শৌচাগার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকায় তা বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

অনুরূপ বাড়িতে, সড়কে বা উঁচু স্থানে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া বন্যাকবলিত লোকজনও এই সমস্যায় ভুগছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৭টি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে প্রায় ১১ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ৬৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে ৮২৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলার অসহায় হতদরিদ্র বানভাসি দুর্ভোগগ্রস্ত মানুষ সরকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠনসহ দেশ ও প্রবাসের বিত্তবানদের কাছে অতীতের মতো তাদের চলমান এই কঠিন দুর্যোগে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.