সন্ত্রাসী তকমা: এনআইএ অ্যাক্টের সর্বশেষ সংশোধনী

কোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী [আনলফুল অ্যাকটিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্টে তাই করার প্রস্তাব করা হয়েছে] হিসেবে ঘোষণা করার ধারণাটি আপাত দৃষ্টিতে ক্ষতিকারক মনে হয় না। তবে কোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করার ফলে গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্নের সৃষ্টি হয় এবং এর অপব্যবহারের শঙ্কা জাগে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের আওতায় ব্যক্তিদের ঘোষণা করার ব্যবস্থা অনেক দেশে থাকার কারণ নিষিদ্ধ গ্রুপগুলো তাদের নাম বদলিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে। তবে কোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করার ব্যবস্থা নেই। আদালতে কোনো ব্যক্তির দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে তাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা যায় কিনা তা অবশ্যই পার্লামেন্টকে বিবেচনা করতে হবে। বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে এর প্রয়োগে তা অবৈধ হয়ে যেতে পারে। ব্যক্তি ও সংস্থার মধ্যে পার্থক্য থাকতে হবে। কারণ ব্যক্তি ভোগ করে জীবনের অধিকার ও স্বাধীনতা। সন্ত্রাসী তকমার পরিণতি সংস্থার চেয়ে ব্যক্তির ওপর অনেক বেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অধিকন্তু, ব্যক্তিরা গ্রেফতার ও আটক হতে পারে, এমনকি আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও তাদের ওপর কলঙ্ক আরোপ ছাড়াও তাদের ভ্রমণ ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। এর ফলে সংস্থাগুলোর চেয়ে ব্যক্তিরাই অনেক বেশি প্রতিকারের মুখে পড়তে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তালিকা থেকে অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সংস্থার মতো ব্যক্তিকেও তাদের নাম বাদ দেয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছেই আবেদন করতে হবে।

ভুল পদবি ব্যক্তির সুনাম, ক্যারিয়ার ও জীবিকার ওপর অমোtচনীয় ক্ষতির কারণ সৃষ্টি করবে। কোনো সন্ত্রাস বা তাদের সহানুভূতিশীলদের না ছাড়ার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি এবং তার ‘নগর মাওবাদী’র উল্লেখে অপব্যবহারের আশঙ্কার সতর্কসঙ্কেত। পার্লামেন্টের অনেক সদস্য বলেছেন, বিলটি ফেডারেল বৈশিষ্ট্র্যের বিরোধী। জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কর্তৃত্ব দেয়াটা নিশ্চিতভাবেই রাজ্য সরকারের কার্যক্রমকে এড়িয়ে যাওয়া। বর্তমানে এ ব্যাপারে প্রথমে রাজ্য পুলিশ প্রধানের অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া এনআইএ পরিদর্শকদেরকে তদন্তের সুযোগ দেয়া হবে। এটিই অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আনলফুল অ্যাক্টিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট, ১৯৬৭-এর ২০০৪ সালের সংশোধনী একে ব্যাপকভিত্তিক সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পরিণত করে। পার্লামেন্ট এরপর ২০০৮ ও ২০১৩ সালে আরো সংশোধন করে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের আইনগত কাঠামো জোরদার করে। কেউই সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করে এমন আইন জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও সরকারের উচিত এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের সময় মৌলিক অধিকার রক্ষায় তার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারটি মনে রাখা।

No comments

Powered by Blogger.