দুবাইয়ের নিখোঁজ রাজকুমারী শামসাকে নিয়ে আজও রহস্য

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা শেইখা শামসা আল মাকতুম ছিলেন রাজ পরিবার থেকে পালানো প্রথম আমিরাতি রাজকুমারী। ২০০০ সালের আগস্টে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের সারের ক্লবহ্যামে বাবা শেখ মহম্মদের কয়েক কোটি পাউন্ড মূল্যের প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজকন্যা শামসা। পরিবারের কট্টর নিয়ম বেঁধে দেয়া জীবন বদলাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, পালানোর দুই মাস পরই ক্যামব্রিজশায়ারের এক রাস্তা থেকে তাকে অপহরণ করে ব্যক্তিগত বিমানে করে আমিরাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও এর সত্যতা আজও নিশ্চিত সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালে নিজেকে রাজকুমারী শামসা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ক্যামব্রিজ পুলিশের কাছে ফোনের মাধ্যমে অপহরণের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন এক নারী। তবে আদতে তিনি শামসাই ছিলেন কিনা তাও নিশ্চিত করা যায়নি। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে তদন্ত স্থগিত করে দেয়া হয়।
এরপর থেকে আজ অবধি, শামসাকে কোনোদিন জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

পালানোর চেষ্টা করেছিল ছোট বোন লতিফাও
সম্প্রতি শামসার ছোট বোনের এক শিক্ষিকা বিগত ১৯ বছর ধরে শামসার জীবনযাপন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তার বর্ণনায় ওঠে এসেছে গা শিউরে ওঠা ভয়াবহ নির্যাতনের কথা। টিনা জওহিয়াইনিয়েন নামের শিক্ষিকা ফিনল্যান্ডের নাগরিক। তিনি ২০০১ সালে তিনি আরব আমিরাতে অভিবাসন করেন। ২০১০ সালে শামসার বোন রাজকন্যা লতিফাকে ব্রাজিলের মার্শাল আর্টস ক্যাপোইরা শেখাতে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। এই সময়ের মধ্যে শামসার ব্যাপারে কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছে তার।
জওহিয়াইনিয়েনের দাবি, এক পর্যায়ে লতিফা নিজের জীবনের গোপন অধ্যায় তুলে ধরে তার কাছে। জানায়, পরিবার থেকে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন থেকে পালাতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ১৬ বছর বয়সেই একবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে পারেননি। ধরা পড়ে যান। পরে তিন বছর জেলে কাটাতে হয় তাকে। ২০১৮ সালে লতিফাকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন জওহিয়াইনিয়েন। তবে তাদের ওই সম্মিলিত চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। উভয়কেই আটক করা হয়, তবে জওহিয়াইনিয়েনকে দুই সপ্তাহ পর মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে লতিফার দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। দুবাইয়ের রাজ পরিবার অবশ্য পরবর্তীতে লতিফার ভালো থাকার প্রমাণ হিসেবে ছবি প্রকাশ করেছে। তবে সে ছবি দেখে তার ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, এমন ধারণা আরো বদ্ধমূল হয় মানবাধিকার কর্মীদের মনে।

কী ঘটেছিল শামসার জীবনে?
এদিকে, লতিফার জীবন নিয়ে হইচই হলেও শামসার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা রহস্যই রয়ে গেছে। জওহিয়াইনিয়েন অভিযোগ তুলেছেন, পালানোর পর শামসাকে ক্যামব্রিজ থেকে জোর করে তুলে আনা হয়। এরপর থেকে তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন শামসা। লতিফার বরাত দিয়ে তিনি জানান, নিয়মিত বেত্রাঘাত করা হতো শামসাকে। নির্যাতন ও মাদকের প্রভাবে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন শামসা।
দুবাইয়ে থাকার সময় দু বার শামসাকে স্বচক্ষে দেখতে পেরেছিলেন জওহিয়াইনিয়েন। প্রথমবার দেখেছিলেন ২০১১ সালে ও শেষবার ২০১৬ সালে। তিনি জানান, ২০১৬ সালে শামসাকে দেখতে অত্যন্ত রুগ্ন, রক্তশূন্য দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তিনি কোনো ঘোরের মধ্যে আছেন।

চলতি সপ্তাহে শেখ মোহাম্মদের ষষ্ঠ স্ত্রী ও জর্ডানের রাজকুমারী হায়া বিনতে হোসাইন তার দুই সন্তানের দায়ভার নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে লড়বেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনুসারে, লতিফা ও শামসার সঙ্গে শেখ মোহাম্মদের নির্মম আচরণ সম্পর্কে জানার পর চলতি বছরের শুরুর দিকে দুবাই ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, আদালতে শামসা ও লতিফার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.