একটা পরিচিতি সঙ্কটের মোকাবেলা করতে বাধ্য হচ্ছে ভারতের কংগ্রেস পার্টি by স্টেফানি ফিন্ডলে

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো নড়বড়ে হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মে মাসের নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পর রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করায় দলের নেতৃত্বের পর্যায়ে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

কর্নাটকে কংগ্রেসের জোট প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বেশ কিছু পদত্যাগ এবং সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে বড় ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর এই দশা হয়েছে কংগ্রেসের।

প্রতিবেশী গোয়াতে কংগ্রেসের ১০ থেকে ১৫ জন আইনপ্রণেতা বিজেপিতে চলে গেছেন এবং উত্তরাঞ্চলীয় ও মধ্যাঞ্চলের রাজ্য রাজস্থান ও মধ্য প্রদেশেও কংগ্রেসের ভেতরে ভয় দেখা দিয়েছে। এই রাজ্যগুলোতে সামান্য ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে এগিয়ে আছে কংগ্রেস।

মোদির কাছে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হওয়ার পর গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি ১৩৪ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই কংগ্রেসের মধ্যে এই ভাঙন শুরু হয়েছে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ২০১৪ সালের জয়ের উপর ভিত্তি করে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে তিন শতাধিক আসন জিতে নিয়েছে। কংগ্রেস সেখানে মাত্র ৫২টি আসন পেয়েছে, যেটা দলটির ইতিহাসের দ্বিতীয় খারাপ ফলাফল।

এই বড় ব্যবধানের পরাজয় কংগ্রেস পার্টির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে: কে দলটির নেতৃত্ব দেবে; দল কি আবার পুনর্গঠন সম্ভব; মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতির বিরুদ্ধে সেক্যুলারিজমকে কি মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়ে দলের অগ্রগতি সম্ভব?

রাজিব গান্ধীর পূর্বপুরুষ জওহরলাল নেহরু – যিনি ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন – তার আমলের পর অর্ধশতাব্দিরও বেশি সময় পেরিয়ে এসে এক সময়কার প্রবল প্রতাপশালি কংগ্রেসকে এখন পুরোপুরি ধরাশয়ী করে দিয়েছেন মোদি।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আশুতোষ ভার্সনি বলেছেন, “এই সঙ্কট কংগ্রেসকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে, অথবা তাদের পুনর্জাগরণের কারণ হতে পারে। তবে এই মুহূর্তের জন্য এটা একটা পরাজয়”।

পদত্যাগের সময় গান্ধী কংগ্রেস দলকে ‘মৌলিকভাবে রূপন্তরের’ আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু দলের হাল ধরার দায়িত্ব না নেয়ায় দলটি এখন পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

দলের নির্বাহী কমিটি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সবশেষ দলের নেতা নির্বাচন করেছিল ২০ বছর আগে, যখন সীতারাম কেশরি স্বল্প সময়ের জন্য দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৮ সালে গান্ধীর মা সোনিয়া কেশরিকে সরিয়ে দলীয় প্রধান হন। ২০১৭ সালে তার ছেলে দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন সোনিয়া।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রাজিব গাওদা বলেন, “আমরা আশা করছি ওয়ার্কিং কমিটি শিগগিরই বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তীকালীন একটা ব্যবস্থা করবে, যাতে আনুষ্ঠানিক নির্বাচন ও মনোনয়ের জন্য প্রক্রিয়াটা শুরু করা যায়”।

সামনের পথে অবশ্য অনেক বাধা রয়েছে। অশোকা ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বিনয় সিতাপাতি বলেন, বহু বছর ধরে বিভাজন ও শাসনের কৌশল এবং গান্ধী পরিবারের শ্রেষ্ঠত্বের নীতির কারণে দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি দুর্বল হয়ে গেছে।

ভার্সনি বলেন, বিজেপির আধিপত্যের মোকাবেলায় আঞ্চলিক জোটের দিকে মনোযোগ দিয়ে কংগ্রেস নিজেকে পুনর্গঠিত করতে পারে। গত বছর উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দিভাষী তিনটি রাজ্যে যেমনটা তারা করেছিল। তিনি বলেন, “এটা একটা পরিবর্তনকালীন সঙ্কট। ১২০ মিলিয়ন ভোটারদের সমর্থন পাওয়া একটা দল হারিয়ে যাবে বলে মনে করি না আমি”।

টিএস লমবার্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিতাভ ডুবেই সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কংগ্রেস যতদিন নেতৃত্বের সঙ্কটের মধ্যে থাকবে, বিজেপি ততদিন তাদের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করা অব্যাহত রাখবে এবং তাদের হিন্দু-প্রথম এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যাবে।

ডুবেই বলেন, “রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সেক্যুলারিজম দুর্বল হয়ে পড়েছে। কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জ হলো সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ করা – এবং তাদেরকে এটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে, কারণ পুরো দেশের আদর্শই এখন হুমকির মুখে রয়েছে”।

No comments

Powered by Blogger.