সীমানা পুনর্বিন্যাস: ইসিতে আবেদনের পাহাড় by সিরাজুস সালেকিন

সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনে আবেদনের স্তূপ জমেছে নির্বাচন কমিশনে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়ার ওপর প্রায় ছয় শতাধিক আবেদন এসেছে ইসিতে। খসড়ার ওপর অভিযোগ-আপত্তি জানানোর সময় শেষ হয়েছে গতকাল। এসব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আগামী ৩০শে এপ্রিল একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত সীমানার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। ইসি সূত্র জানায়, সীমানা পুনর্বিন্যাসে এ পর্যন্ত প্রায় ৬১০টি আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় চার শতাধিক আবেদন পড়েছে রোববার। গত ১৪ই মার্চ ৩৮টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করে ইসি। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ইসির প্রস্তাবে পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনে ইসির প্রস্তাবিত সীমানায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকারের  মন্ত্রী-এমপিরাও। ইসি সূত্র জানায়, অভিযোগ আপত্তির ওপর শুনানি হবে। আগামী ৩০শে এপ্রিল ৩০০ আসনের চূড়ান্ত সীমানা তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। গত ১৪ই মার্চ প্রকাশিত সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়ায় ৩৮টি আসনের সীমানায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। খসড়া তালিকায় যে ১৬ জেলার সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো- নীলফামারী ৩, ৪; রংপুর ১, ৩, ৪; কুড়িগ্রাম ৩, ৪; পাবনা ১, ২; মাগুরা ১, ২; খুলনা ৩, ৪; খুলনা ৩, ৪; সাতক্ষীরা ৩, ৪; জামালপুর ৪, ৫; ঢাকা ২, ৩, ৭, ১৪, ১৯; নারায়ণগঞ্জ ৪, ৫; শরীয়তপুর ২, ৩; মৌলভীবাজার ২, ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৫, ৬; কুমিল্লা ১, ২, ৬, ১০; নোয়াখালী ৪, ৫ এবং চট্টগ্রাম ৭, ৮। ইসি সূত্র আরো জানায়, প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়েছে সীমানা পুনর্বিন্যাসে। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন রোধ করা হয়েছে নতুন সীমানায়। যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা নতুন সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের কারণে নতুন করে কিছু এলাকা কয়েকটি আসনে যুক্ত হয়েছে। সীমানা পুনর্গঠন পদ্ধতিতে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থ যথাযথ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একাদশ সংসদে বহাল থাকছে আগের সীমানা। গত বছর নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দশম সংসদের সীমানা বহাল রাখা দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি ২০০৮ সালের আগেই সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি করে আসছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে ১৩ই মার্চ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই প্রস্তাবিত পুনর্গঠিত এলাকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য দাবি করেছেন, বৈঠকে সীমানার বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ দাবি অস্বীকার করে জানান, আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ১৪ই মার্চ নির্বাচন কমিশনের ২১তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমানা পুনর্নির্ধারণের অগ্রগতি প্রতিবেদন বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল। ১৯শে মার্চ কমিশনের ২২তম সভারও একই বিষয়ে এজেন্ডা ছিল। কিন্তু খুব দ্রুততার সঙ্গে ১৪ই মার্চ খসড়া প্রকাশ করে ইসি। গেল বছর ১৬ই জুলাই ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে সীমানা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। পরিকল্পনার আড়াই মাস পর খসড়া প্রকাশ করে ইসি। রোডম্যাপে সিইসি বলেছিলেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নতুন আইন করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেও নতুন আইন প্রণীত হয়নি। সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য পরামর্শকও নিয়োগ দিয়েছিল ইসি। কিন্তু ছোটখাটো পরিবর্তন করেই খসড়া করে প্রকাশ করে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে সর্বশেষ পঞ্চম আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী জনসংখ্যার যথাসম্ভব সমতা রেখে দশম সংসদ নির্বাচনে আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস করা হয়। পরবর্তী আদমশুমারির প্রতিবেদন হবে ২০২১ সালে। ইসি কর্মকর্তারা আগেই বলেছিলেন, প্রস্তাবিত আইন পাস হলে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিদ্যমান সীমানাতেই হতে পারবে। শুধু বিলুপ্ত ছিটমহল ও নতুন উপজেলা বা প্রশাসনিক কিছু এলাকা সংসদীয় আসনের সঙ্গে যুক্ত করলেই চলবে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার দরকার পড়বে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৮৪, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। দশম সংসদে ছয়টি নীতিমালা অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.