‘নরকের অস্তিত্ব নেই’: পোপের মন্তব্যের পর বিপাকে ভ্যাটিক্যান

নরকের অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। তার এই মন্তব্যের পর বিপাকে পড়েছে সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভ্যাটিক্যান। প্রখ্যাত এক ইতালিয়ান সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ নরকের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। পরে পোপের মন্তব্য নিয়ে ভ্যাটিক্যানের বক্তব্য জানতে চাইলে হিমশিম খেয়েছে ভ্যাটিক্যান। সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ এই ধর্মীয় সংস্থাটি বলছে, পোপের বক্তব্য ওই সাক্ষাৎকারে যথাযথভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি। এ খবর দিয়েছে গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, বুধবার লা রিপাবলিকা পত্রিকায় ইউজেনিও স্ক্যালফারি নামে ওই পত্রিকার ৯৩ বছর বয়সী প্রতিষ্ঠাতার এক দীর্ঘ প্রবন্ধে পোপকে উদ্ধৃত করা হয়।
স্ক্যালফারি নিজে অবশ্য নাস্তিক। তবে ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। ভ্যাটিক্যান স্বীকার করেছে যে, ইস্টারের সপ্তাহান্তে পোপের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়েছে। তবে পোপের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি ছিল না তার।
পত্রিকায় প্রকাশিত কথোপকথনের বিবরণ অনুযায়ী, ওই বৈঠকে স্ক্যালফারি পোপ ফ্রান্সিসকে জিজ্ঞেস করেন, ‘খারাপ আত্মা’রা কোথায় যাবে। এ সময় পোপ বলেন, ‘তাদেরকে সাজা দেওয়া হবে না। যারা অনুতপ্ত হন তারা সৃষ্টিকর্তার মার্জনা লাভ করেন। তারা এভাবে নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার আরাধনাকারীদের কাতারে নিয়ে যান। কিন্তু যারা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন না ও সৃষ্টিকর্তার মার্জনা লাভ করতে পারেন না, তারা অদৃশ্য হয়ে যান। নরকের অস্তিত্ব নেই। পাপী আত্মারা অদৃশ্য হয়ে যায়।’
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভ্যাটিক্যান বলেছে, ‘পোপের বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করা হয় নি। এই নিবন্ধকে ‘হলি ফাদারে’র বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিলিপি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না।’
সাংবাদিক স্ক্যালফারি অবশ্য হাই প্রোফাইল সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তা রেকর্ড করেন না ও নোট নেন না বলে কথিত আছে। এর আগেও পোপের বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছিল। ২০১৪ সালে তিনি এক নিবন্ধে লিখেছেন যে, পোপ ফ্রান্সিস ‘পাপ’ বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। তখনও ওই বক্তব্য সঠিক নয় বলে নিন্দা জানিয়েছিল ভ্যাটিক্যান।
স্ক্যালফারি ও পোপের মধ্যকার বন্ধুত্ব নিয়েও সমালোচনা আছে। স্ক্যালফারি একবার বলেছেন, পোপই বৈঠকের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানান। কারণ, তিনি অবিশ্বাসীদের সঙ্গে ধ্যানধারণা ও অনুভূতি আদানপ্রদান করতে চান।
ক্যাথলিক চার্চের দীক্ষায় নরকের অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকৃত। ২০০৭ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট বলেছিলেন, ‘নরকের অস্তিত্ব সত্যিই আছে। এটি চিরস্থায়ী। যদিও কেউই এখন এটা নিয়ে কথা বলে না।’ ১৯৯৯ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল ঘোষণা দেন, ‘পাপের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে নরক। এটি কোনো স্থান নয়। নরক হলো একটি অবস্থা, যখন পাপিষ্ঠরা নিজেদেরকে ঈশ্বর থেকে চূড়ান্তভাবে পৃথক করে ফেলে।’
তবে বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসকে উদারমনা বলেই ভাবা হয়। রোমের রেজাইনা কোলি কারাকারের ১২ বন্দীর পা পোপ ফ্রান্সিস নিজে পানি দিয়ে ধুয়ে দেন। তখন থেকেই বিতর্কের শুরু। ওই ১২ বন্দীর মধ্যে দুই মুসলিম ছিলেন। ছিলেন একজন রক্ষণশীল খ্রিস্টান, একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও। তিনি ওই বন্দীদের বলেন, ‘সবারই নিজের জীবন পরিবর্তনের সুযোগ আছে।’
সেবার ছিল পোপ হওয়ার পর ইতালির কোনো কারাগারে তার চতুর্থ প্রার্থণার আয়োজন। তিনি ওই বন্দীদের আরও বলেন, ‘আমিও আপনাদের মতো একজন পাপিষ্ঠ। কিন্তু আজ আমি যিশুর প্রতিনিধিত্ব করি। সৃষ্টিকর্তা কাউকেই পরিত্যাগ করেন না। তিনি আমাদের ক্ষমা করতে কখনও ক্লান্তিবোধ করেন না।’

No comments

Powered by Blogger.