গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি: সারা দেশে লিফলেট বিতরণ

খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ  কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা প্রদানসহ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসচিব এ কর্মসূচির সূচনা করেন। এসময় তিনি বলেন, আন্দোলনের মধ্য দয়েই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। গণতন্ত্র ধ্বংস করতে এই অবৈধ সরকারের যে নীলনকশা এবং নীল প্রচেষ্টা করছে, সেটাও পরাস্ত করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে যে শপথ নিয়েছি, তারই অংশ হিসেবে আজকের এই লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি।
সিনিয়র নেতারা দল ছাড়তে পারেন কিন্তু মাঠের নেতারা দল ছাড়বে না- তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পুরনো কথার জবাব দেয়ার দরকার নেই। আমরা যারা রাজনীতিবিদ তারা রাজনীতির মাঠে অনেক কথা বলি। মূল বিষয়টা আপনারাই (সাংবাদিকরা) বের করে নেন। সুতরাং বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের বিষয় মিডিয়াতে একটা প্রবণতা রয়েছে, মূল জায়গাতে না গিয়ে আমরা ওইসব জায়গা খুঁজে বেড়াই।
ফখরুল বলেন, এটাই সমস্যা, আজকের মূল বিষয়টা কী? দেশে গণতন্ত্র নেই। আমাদের অধিকার নেই। আপনাদের (মিডিয়ার) সবকিছু লেখার এবং বলার অধিকার নেই। সুতরাং সেই জায়গাগুলোয় আমাদের যাওয়া উচিত। আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিত। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সরকার হীন প্রচেষ্টা করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আন্দোলনের মধ্যদিয়েই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ এবং এই অবৈধ সরকারের যে হীন প্রচেষ্টা ও নীলনকশা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার, তাকেও আমরা পরাস্ত করতে সক্ষম হব। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিহিংসার কারণে সরকার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের নেতা, যাকে মানুষ গণতন্ত্রের মাতা বলে শ্রদ্ধাভরে সম্বোধন করেছে সেই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এ অবৈধ সরকার অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা সাজিয়ে এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে কারারুদ্ধ করেছে। তার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী দলসহ ২০ দলীয় জোট ও গণতন্ত্রকামী মানুষ সংগ্রাম করছে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছি, কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, বিরোধী দলের মতকে স্তব্ধ করে দেয়ার ও সরকারের একদলীয় শাসন প্রবর্তন করার যে নীল নকশা তা রুখে দেয়ার জন্য এ লিফলেটের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি সারা দেশে শুরু হয়েছে; যা আগামী কয়েক দিন চলবে। তারপর আমাদের ঘোষিত অন্য কর্মসূচি পালন করা হবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলনে, রোববার আমাদের সিনিয়র নেতাদের যৌথসভা আছে, সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে আমরা বক্তব্য দিয়েছি। জাতি জেনেছে কী হচ্ছে। এ বিষয়ে মিডিয়ার আরও বেশি জানা দরকার। ‘নৌকায় ভোট চাওয়া রাজনৈতিক অধিকার’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অধিকার সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন আরপিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ সব রাজনৈতিক দলের জন্য। কিন্তু বিষয়টা তো হচ্ছে তারা (আওয়ামী লীগ) সরকারি টাকা খরচ করে নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। আর কেউ করতে পারবে না, কাউকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না এটা কখনও মেনে নেয়া যেতে পারে না।
পরে মির্জা ফখরুল নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয় থেকে পায়ে হেঁটে ফুটপাতের দোকানদার, রিকশা চালক, পথচারীসহ সাধারণ মানুষের হাতে ‘গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার  নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করেন।
সকাল ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মহাখালীতে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। লিফলেট বিতরণের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে কয়েক দফা বাধা প্রদান করে। এসময়ে সেখান থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারসহ আরো কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা যখন মহাখালীতে লিফলেট বিতরণ শুরু করেন, সেই সময় কয়েক দফা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই সময় বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আর সেখান থেকে চলে আসার পরে ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে পুলিশ আটক করে।
বিশিষ্ট ক্যানসার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে আটক করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স  অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব)-এর ৬২৫ জন শিক্ষক। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান রাজধানীর উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে কল্যাণপুরের মিজান টাওয়ারসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানপাটে মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলু, এসএ সিদ্দিক সাজুসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেটের সামনে লিফলেট বিতরণ করেন। এসময়ে সেখানেও পুলিশ বাধা প্রদান করে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক। ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায়, পল্লবী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। একইভাবে দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় পৃথকভাবে লিফলেট বিতরণ করেন।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে মহাখালী এলকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়। তারা সন্ধ্যার পরও মহাখালী কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় এই লিফলেট বিতরণ করেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে এই কর্মসূচি পালন করে। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম ও বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার নেতৃত্বে রাজধানীর তোপখানা রোড, পল্টন এলাকায় এই কর্মসহৃচি পালন করা হয়।
সারা দেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও থানাপর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপিবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা ও জামিন এবং আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা বৈঠকে অংশ নেন। যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরাও বৈঠকে ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, শুরুতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতাদের উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। বৈঠক চলাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.