উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,’৭৫-এর পর থেকে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তো বাংলাদেশের  উন্নতি করতে পারেনি। তাদের একটাই উন্নতি ছিল, তা হলো দুর্নীতির উন্নতি। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেট করেছে। পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারা সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছে। এতিমখানা বানানোর কথা বলে তা করা হয়নি। সেই টাকা লুটপাট, চুরি করে খেয়েছে। উন্নয়ন এর ধারাবাহিকতা চাইলে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। নৌকা আপনাদের মার্কা। রোববার বিকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জেলায় ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৫টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যাতে উন্নয়ন করতে পারি, সেজন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ সরকার এর আগে দেয়া প্রত্যেকটি ওয়াদা রক্ষা করেছে। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। আমরা আলো’র ব্যবস্থা করবো, ইনশাআল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-খালেদা জিয়াকে ধিক্কার জানাই। যুদ্ধাপরাধীরা হিসেবে যারা অভিযুক্ত তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছে। ওদের লজ্জা-শরম কম। ওরা তো বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দুস্থ মানুষের সেবা করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কল্যাণ করে। এটাই আওয়ামী লীগের জন্য নীতি। এটিই আওয়ামী লীগের আদর্শ। দেশে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যখনই ক্ষমতা এসেছে তখনই অত্যাচার-নির্যাতন, দেশের সম্পদ পাচার করেছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলায় তারা পারদর্শী। এটাই তাদের আন্দোলন। আন্দোলনের নামে তারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য, দারিদ্র্যবিমোচন করা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা; এমনকি দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-পুতিদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের স্বাধীনতা এনেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া), সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের উন্নয়নে কোনো দাবি করা লাগবে না। ইনশাআল্লাহ, চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ করে দিবো। স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজেই একজন ডাক্তার। তার জন্য মেডিকেল কলেজ করবো। চাঁদপুরের হাইমচরে গিয়েছিলাম। চাঁদপুরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিবো। সেখানে বিনিয়োগ হবে, শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এখানে পর্যটনের ব্যবস্থা করবো। নৌ-ভ্রমণের জন্য এখানকার জায়গা সুন্দর।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন করবো। আমরা চাই, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই।
তিনি আরো বলেন, ইতিহাসকে যারা বিকৃত করেছিল, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। সেই ভাষণকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে কখনো চাপা দেয়া যায় না। এটি বিএনপি-জামায়াতকে শিক্ষা নেয়া উচিত। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ।
এর আগে হাইমচরে ষষ্ঠ জাতীয় স্কাউট সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্কাউটদের ভূমিকা রাখতে হবে। স্কাউট সদস্যদের প্রতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ দেশ। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। স্কাউট সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আগামী দিনে রোভার স্কাউট সদস্যরা দেশের নেতৃত্ব দিবে। তোমরাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে এবং সেই গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবে। এজন্য তোমাদের দেশের জন্য যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে দেশ এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়ন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি অভিভাবক ও স্কাউটদের উদ্দেশে বলেন, ছেলেমেয়েরা যাতে সুশিক্ষা পায়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, তাদের মনমানসিকতা যেন আরো উন্নত হয় এবং সেগুলো যেন সৃষ্টিধর্মী হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা শিক্ষা দিতে চাই। চাঁদপুরের হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং এই অঞ্চলের উন্নতি হতে পারে। তাছাড়া খুব ভালো পর্যটন কেন্দ্র হবে এবং নৌ-ভ্রমণের জন্যও চমৎকার জায়গা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িবহরে হামলা: চাঁদপুরে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ মো. গোলাম হোসেনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ২০ নেতাকর্মী। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোলাম হোসেন চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগদানের পথে কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর কাঁঠাল বাগান, রাজাপুর সকিনার দালান ও  রাজাপুর তুলা গাছতলা এলাকায় তার গাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত ও ১০টি গাড়ি ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন গোলাম হোসেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কচুয়ার হাসিমপুরস্থ ফয়েজুন নেছা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
চাঁদপুর জেলা পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মো. জোবায়ের হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় সময় আলহাজ মো. গোলাম হোসেনের নেতৃত্বে চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাওয়ার সময়  পথিমধ্যে কাঁঠাল বাগান, সকিনার দালান ও রাজাপুর এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীরা আমাদের গাড়িবহরে হামলা, ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের মারধর করে। কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানের নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা ও আটকের বিষয়ে শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি এবং তাদের পুলিশি পাহাড়ায় কচুয়ার সীমানা পার করে দিয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.