বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবধরনের ভ্যাটমুক্ত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবধরনের ভ্যাটমুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি ভবনের সম্মেলন কক্ষে  অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছুতেই ভ্যাট নেয়া যাবে না। এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু থাকবে ভ্যাটের আওতামুক্ত। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপাতত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের কর আরোপ করা হবে না। শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদালয়ের সব ধরনের আয় করমুক্ত থাকবে।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের কাছ থেকেও ভ্যাট নেয়া হবে। তবে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক) ভ্যাট নেবেন কি নেবেন না- সেটা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রীর ওই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে বিষয়টি উঠলে প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কে বা কারা কি বলেছেন, জানি না। আমার মনে হয় না, অর্থমন্ত্রী এই কথা বলেছেন। তিনিও (অর্থমন্ত্রী) একনেক সভায় ছিলেন। তিনি এই বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি আরো বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ট্রাস্টি, এমনকি ভবনের ওপর কোনো ভ্যাট বসানো হবে না। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। তবে, এতে উভয়পক্ষের জন্য ‘উইন উইন’ অবস্থা হতে হবে জানিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার যেন রাজস্ব পায়, আবার ভ্যাট দিচ্ছেন-তারাও যেন কিছু পান। ভ্যাট হার নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কোনো নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট বসবে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট আরোপ সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত, এটা সরকারের বক্তব্য নয়।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে স্কুলে এই ভ্যাট আরোপ করে সরকার। এরপর বেরসরকারি উচ্চ শিক্ষায়ও ভ্যাট আরোপ করা হলে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তখন সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত একনেকের ওই সভায় ১৬টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে। বিভিন্ন দফায় সমন্বয় করে বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের ভারি মালামাল নিরাপদে ও দ্রুত প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে নেয়া এই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অন্যদিকে ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প। প্রকল্প দু’টি একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.